শাঁখাই ঘাটের এবড়োখেবড়ো সিমেন্টের জেটিতে এসে দাঁড়ায় নৌকা। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি কালনা ফেরিঘাটে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। কিন্তু তারপরেও লাইফ জ্যাকেট, সিসিটিভি এমনকী পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই এই ঘাটে। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেয়া পারাপার চলছে কাটোয়ার শাঁখাই ঘাটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, ফি দিন ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাজার খানেক যাত্রী এই ঘাট থেকে যাতায়াত করেন। কাটোয়া, কেতুগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন যাতায়াতের জন্য এই ঘাটটির উপরেই ভরসা করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘাটের নিরাপত্তা ও যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্নে নজর নেই প্রশাসনের। এই ঘাটটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতি।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ জুন একটি বৈঠকে মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ঘাটের নিরাপত্তা নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়। যেমন, প্রতিটি নৌকোতে যাত্রী সংখ্যা লেখা বোর্ড টাঙাতে হবে, রাখতে হবে লাইফ জ্যাকেটের বন্দোবস্ত প্রভৃতি। যাত্রীদের অভিযোগ, ওই সব নির্দেশের কোনওটাই মানা হয় না শাঁখাই ঘাটে। অথচ কাছেই বেসরকারি ইজারাদার পরিচালিত ফেরিঘাটে মহকুমাশাসকের নির্দেশমতো প্রায় সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান যাত্রীরা।
শাঁখাই ঘাটের ছবিটা কেমন? কোনও নৌকোতেই যাত্রী সংখ্যা লেখা বোর্ড টাঙানো তো নেইই। উল্টে বহন ক্ষমতার থেকে বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে নৌকোগুলি। বেশ কয়েকটি নৌকোয় আবার বেশি যাত্রী পরিবহণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের চালির। নৌকো থেকে বেশ খানিকটা বেরিয়ে থাকে এই ধরনের চালিগুলি। যাত্রীরা জানান, চালির উপর দাঁড়িয়ে যেতে যেতে যে কোনও সময় জলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রীরা জানান, মাঝেসাঝেই ঘটছে দুর্ঘটনাও। যেমন বিনোদ সাহা নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘সম্প্রতি মৌগ্রামের এক বাসিন্দা ঘাটের কাছে নৌকো পড়ে যান। উনি সাঁতার জানার ফলে কোনওক্রমে বেঁচে যান।’’
দুর্ঘটনা ঘটলে তা সামাল দেওয়ার জন্য ঘাটে নেই লাইফ জ্যাকেটেরও। এ ছাড়া, লাউড স্পিকার, সিসিটিভি, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা— কোনও কিছুরই বন্দোবস্ত নেই এই ঘাটে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় অনেক সময়েই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান বাসিন্দারা। শিলুরি গ্রামের বাসিন্দা সাবির মোল্লা বলেন, ‘‘রাতে পারাপারের সময় প্রায়ই কেউ না কেউ পড়ে যান। মোটরবাইক শুদ্ধ পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’’ দেবনারায়ণ সাহা নামে আরও এক যাত্রী জানান, দিন কয়েক আগে একটামাত্র পিএল আলো ছিল ঘাটে। মাস তিনেক ধরে সেটাও নেই। এই পরিস্থিতিতে রাত্রি নামলে মাঝিদের ছোট ল্যাম্প অথবা যাত্রিদের টর্চই ভরসা। ঘাটের নিরাপত্তারে জন্য কোনও পুলিশকর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ারেরও দেখা মেলে না বলে জানান বাসিন্দারা।
কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘এই তো দিন কয়েক হল মহকুমাশাসকের নির্দেশিকা পেলাম। সময়মতো কাজ শুরু হবে।’’ মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার অবশ্য বলেন, ‘‘৮ জুন বৈঠকের আগেই ওই পঞ্চায়েত সমিতিকে ঘাটে নিরাপত্তার নির্দেশিকা দেওয়া হয়। কেন নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখা হবে।’’