বন্ধ ফেরি, রাত কাটল খেয়াঘাটেই

বুধবার দুপুর থেকে অজয় ও ভাগীরথীর জল ক্রমশ বাড়ছিল। সেই সঙ্গে প্রচুর আবর্জনা ভেসে আসায় মোটরচালিত নৌকা চালানো বিপজ্জনক হয়ে পড়ে বলে জানান ঘাটের ইজারাদার ও মাঝিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া ও কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

কাটোয়ায় বন্ধ ঘাট। নিজস্ব চিত্র

কেউ অফিস সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ বা ডাক্তার দেখিয়ে। কারও বাড়ি বল্লভপাড়া, কারও দেবগ্রাম বা কালীগঞ্জে। কিন্তু বুধবার কাটোয়াক ঘাটে পৌঁছে ফেরি চলাচল বন্ধ দেখে মাথায় হাত পড়ে তাঁদের। জল বাড়ায় ভাগীরথীর দু’টি ঘাট বন্ধ থাকায় রাতভর ভোগান্তি পোহাতে হল নদিয়ার ওই যাত্রীদের। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ রাস্তাতেই রাত কাটালেন। বৃহস্পতিবারও সারা দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটান যাত্রীরা।

Advertisement

বুধবার দুপুর থেকে অজয় ও ভাগীরথীর জল ক্রমশ বাড়ছিল। সেই সঙ্গে প্রচুর আবর্জনা ভেসে আসায় মোটরচালিত নৌকা চালানো বিপজ্জনক হয়ে পড়ে বলে জানান ঘাটের ইজারাদার ও মাঝিরা। তাই ফেরিঘাট, শাঁখাই ঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। বন্ধ রাখা হয় দাঁইহাটের মাটিয়ারি ঘাটের ফেরিও। শাঁখাই ঘাট বন্ধ থাকায় কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর, গঙ্গাটিকুরির যাত্রীদের চরখি হয়ে ঘুরপথে বাড়ি পৌঁছতে হয়। রাত ৯টার পরে পর্যাপ্ত বাস না মেলায় ভ্যানো, ট্রেকারে চেপে রওনা হন নিত্যযাত্রী সীমা মণ্ডল, পুলক সাহারা। প্রায় মাঝ রাতে গিয়ে পৌঁছেছেন তাঁরা।

তবে চরম দুর্ভোগে পড়েন বল্লভপাড়াগামী যাত্রীরা। কাটোয়ায় একটি সোনার দোকানে কাজ করেন বল্লভপাড়ার বাসিন্দা সুশোভন চক্রবর্তী। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো ৯টা নাগাদ দোকান থেকে বেরিয়ে শেষ ফেরিতে বাড়ি যাবেন বলে ঘাটে পৌঁছন। কিন্তু ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিপদে প়়ড়ে যান। রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গেলেও ফল হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারও ফেরি চলল না। বাড়িতে কারও কোনও বিপদ হলেও তো যেতে পারব না!’’ এই রাতও কী ভাবে কাটবে, সে নিয়ে চিন্তায় পড়েন তিনি।

Advertisement

জলমগ্ন: উপরে, কাটোয়া-কেতুগ্রাম বাইপাস রাস্তায় বইছে জল। নিজস্ব চিত্র

রাতে জনা চব্বিশ যাত্রী বল্লভপাড়া যাওয়ার জন্য খেয়াঘাটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিল তিন শিশুও। রাত ১২টা নাগাদ মহকুমাশাসক সৌমেন পালের তৎপরতায় ফেরিঘাটের ছোট লকগেটটি খুলে দেন ইজারাদার। ঘাটে ছাউনির নীচে ঠাঁই হয় এক আদিবাসী দম্পতির। মাস তিনেকের শিশুর জন্য দুধের ব্যবস্থাও করেন মহকুমাশাসক। বল্লভপাড়ার বাসিন্দা এক রোগী ও তাঁর পরিবার ঘাট লাগোয়া পুরসভার বিশ্রামঘরে রাত কাটান। বাকিরা আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান। এ দিন সকাল থেকে বাস, ট্রেনে অনেকে বাড়ি রওনা হন।

এই ঘাট দিয়ে নিয়মিত পারাপার করেন কেতুগ্রাম ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রাজস্ব আধিকারিক অর্নিবাণ মজুমদার। তিনি বলেন,‘‘বল্লভপাড়া ও কাটোয়া, দু’দিকেই জল অনেকটা বেড়েছে। প্রশাসন কড়া নজর রাখছে।’’ স্থানীয় মাঝি জামফল রাজোয়ার বলেন, ‘‘নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। জলের সঙ্গে পানা ও প্রতিমার কাঠামো যে ভাবে ভেসে আসছে, নৌকা চালানো মুশকিল।’’ কালীগঞ্জের বিডিও নাজির হোসেন বলেন, ‘‘স্পিড বোট, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা এসেছেন। জরুরি প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকট নিয়ে নৌকা চালানো হচ্ছে।’’

ঘাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও সমস্যায়। নিচুবাজার, শাঁখারিপট্টির বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। রিকশা চালক মনোহর শেখ, সুরজ মল্লিকদের কথায়, ‘‘ও পার থেকে রোগী, ব্যবসায়ী, পড়ুয়ারা না আসায় যাত্রী মিলছে না। কোনও রোজগারই হল না।’’ তবে ফেরি বন্ধ থাকলেও রোগীদের জন্য ছোট নৌকা ছাড়া হচ্ছে বলে জানান ইজারাদার অশোক সরকার। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখালে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে। এ দিন ফেরিঘাট পরিদর্শন করেন মহকুমাশাসক সৌমেনবাবু। তবে প্রশাসনের অনুমতিতে এ দিন সকাল থেকে দাঁইহাটের মাটিয়ার ঘাটে পরাপার শুরু হয় বলে জানান ইজারাদার রামেশ্বর সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement