এক সময় এখানে ছিল কৃষিজমি। অজয়পল্লিতে। নিজস্ব চিত্র
কয়েক বছর ধরে একটু একটু করে অজয় নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে পাড়। বর্তমানে নদ থেকে কৃষিজমির দূরত্ব কয়েক মিটার মাত্র। আবার বর্ষায় নদের জল বাড়লে, সেই দূরত্বও ঘুঁচে যাবে, এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের অজয়পল্লি এলাকার চাষিরা। তাঁরা জানান, নদের পাড়েই তাঁদের চাষাবাদ। জমি গিলে নিলে তাঁরা কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এ দিকে, বিরোধীদের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে বালি তোলার ফলে, নদের গতিপথ পাল্টে গিয়েছে। যার জেরে এই পরিস্থিতি। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন। পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের তরফে সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিদবিহার পঞ্চায়েতের অজয়পল্লি এলাকায় প্রায় চারশো পরিবারের বাস। পূর্ববঙ্গের মানুষই রয়েছেন এলাকায়। কৃষিই যাঁদের প্রধান আয়ের উৎস। সারা বছর নানা ধরনের ফসল উৎপাদন করেন তাঁরা। অজয়পল্লি গ্রামের অদূরেই রয়েছে অজয় নদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই নদের পাড়ের জমিতে আলু, পটল, কুমড়োর মতো বিভিন্ন আনাজ চাষ করে থাকেন তাঁরা। তাঁরা জানান, কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে নদ আস্তে আস্তে গ্রাস করেছে অনেকটা এলাকা। অজয়পল্লি থেকে শুরু হয়েছে ভাঙন। যা চলে গিয়েছে প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত বনকাটির দেউল এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা, চাষি গোলক সরকার জানান, এখন কৃষিজমি থেকে অজয় নদের দূরত্ব মেরেকেটে মাত্র ১০ মিটারের মতো। গরমের সময় সে ভাবে জল না থাকলেও, বর্ষায় দুকূল ছাপিয়ে জল যায় অজয়ের জল। আর সে সময় ভাঙনের কবলে পড়ে এলাকা। স্থানীয় আর এক চাষি বিকাশ বিশ্বাস জানান, এখন নদ যে দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেখানে এক সময় চাষাবাদ করতেন অনেকে। ২০২০-তেও অজয়ে জল অনেকটাই বেড়েছিল বলে জানান তিনি। তাঁরা বলেন, “সে সময় জলে অনেকটা পাড় ভেঙেছিল। কৃষিজমিও জলের তলায় গিয়েছিল। যে ভাবে ভাঙন হচ্ছে, তাতে আমাদের জমিও জলের তলায় চলে যাবে!” এই এলাকায় একটা শক্তপোক্ত বাঁধ তৈরির প্রয়োজন রয়েছেবলে চাষিদের।
ভাঙন প্রসঙ্গে বিজেপির বর্ধমান সদর সহ-সভাপতি রমন শর্মার অভিযোগ, “শাসক দলের মদতে দুষ্কৃতীরা অবৈধ ভাবে বালি তোলার ফলে নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এর ফল ভুগতে হচ্ছে স্থানীয়দের।” সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলও ভাঙনের জন্য অবৈধ বালিঘাটকেই দায়ী করেছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, “এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। প্রচারে থাকতে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি সমীর বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসনের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকরা হবে।”