সেচ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পাটের জমি। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ দিন ধরে জেলায় তেমন বৃষ্টি নেই। চাষিদের দাবি, রোদের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত সেচের। লাগাতার মাটির তলার জল সেচের কাজে ব্যবহার করায় এক দিকে জলস্তর নামছে। আবার বাড়তে শুরু করেছে চাষের খরচও।
চাষিদের দাবি, মাস ছয়েক ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। রবি মরসুমে এমন এক দিনও যায়নি, যে দিন বৃষ্টিতে মাটি ভিজেছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, কালনা মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর বৃষ্টি মিলেছিল ১ থেকে ২ মিলিমিটার। এ মাসের ২৫ তারিখ পূর্বস্থলী ২ ব্লকে বৃষ্টি মেলে ৩.১ মিলিমিটার। ১১ মার্চ মন্তেশ্বর ব্লকে বৃষ্টি মিলেছে ৮.৪ মিলিমিটার। চাষিরা জানান, চাষ বাঁচাতে মাটির তলার জলে ভরসা করতে হচ্ছে। পূর্বস্থলীর দুটি ব্লকে প্রচুর আনাজের চাষ হয়। সেখানে জলের প্রয়োজনও বেশি। কালেখাঁতলা ২ এলাকার আনাজ চাষি ফরিদ শেখ বলেন, ‘‘রোদে আনাজের জমি ফেটে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় জল বেশি লাগছে। বাড়তি জল কেনার জন্য খরচও বেড়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, গরম বাড়তে থাকায় আনাজের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ভারী বৃষ্টি না হলে সমস্যা বাড়বে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকে বড় এলাকা জুড়ে আম, লিচুর চাষ হয়। আম চাষি গোবিন্দ ঘোষের কথায়, ‘‘মুকুল থেকে বোঁটায় ছোট ছোট আম ধরছে এখন। এই সময়ে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। না হলে আম ঝরে যাবে।’’
বহু চাষি পাট চাষের প্রস্তুতি নেন এই সময়ে। কালবৈশাখীর প্রভাবে কিছুটা বৃষ্টি পেলে বীজ বোনার কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। এ বার এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মাটির নীচ থেকে জল তুলেই জমি তৈরি শুরু করেছেন তাঁরা। বেশ কিছু এলাকায় ধানের জমিও শুকিয়ে যেতে বসেছে। চাষ বাঁচাতে মরিয়া চাষিরা মাটির তলা থেকে অতিরিক্ত জল তুলতে শুরু করেছেন।
জেলার এক কৃষি বিশেষজ্ঞ জানান, ইতিমধ্যেই জেলার একটি ব্লক ক্রিটিক্যাল এবং পাঁচটি ব্লক সেমি ক্রিটিক্যাল তালিকায় রয়েছে। মাটির তলা থেকে অতিরিক্ত জল তোলা মানেই বিপদ আরও বাড়ানো। যা পরিস্থিতি তাতে দ্রুত বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘‘চাষের জন্য জলের ব্যবহারে চাষিদের যত্নবান হতে হবে। সাধারণ ভাবে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে ২২০০ থেকে ২৪০০ লিটার জল লাগে। ফলে জল যাতে অপচয় না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কম জল লাগে এমন পদ্ধতিতে ঝুঁকতে হবে।’’
জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আশা করছি খুব দ্রুত কালবৈশাখীর প্রভাবে বৃষ্টি হবে। কম জলে চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে সারা বছর ধরেই চাষিদের মধ্যে প্রচার চালানো হয়।’’