Elephant Herd

elephant destroying crops: ক্ষতিপূরণ নিয়ে চিন্তা চাষিদের

চাষিদের দাবি, এক বিঘে ধান চাষ করতে গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। হাতিতে ধান নষ্ট করায় শস্যবিমাও মিলবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ০৯:১২
Share:

- ধান খেতের মধ্যে দিয়ে চলেছে হাতি দল। আউশগ্রামের কুমারগঞ্জে। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে

আর কয়েক দিন পরেই পাকা ধান কেটে গোলায় তুলতেন চাষিরা। কিন্তু হাতির দল ঢুকে নষ্ট করে দিয়েছে বিঘার পর বিঘা খেতজমি। চাষিদের দাবি, এক বিঘে ধান চাষ করতে গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। হাতিতে ধান নষ্ট করায় শস্যবিমাও মিলবে না। কী ভাবে বন দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হবে, তারও অভিজ্ঞতা নেই আউশগ্রাম ও গলসির বেশির ভাগ চাষির। বন দফতরের আধিকারিকদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার পরেও কতখানি ক্ষতিপূরণ মিলবে, কবেই বা মিলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে চাষিদের একাংশের।

Advertisement

শুক্রবারই রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান তার ব্যবস্থা করা হবে।’’ জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী জানান, বহু ধানের জমিতে ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা হয়নি। তবে চাষিদের হাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

বন দফতর সূত্রে জানা যায়, রেঞ্জ অফিস থেকে ফর্ম নিয়ে চাষিদের কত জমি ক্ষতি হয়েছে তার বিশদ তথ্য জমা করতে হবে। তা খতিয়ে দেখে বন দফতর রাজ্যের অধিকর্তার কাছে পাঠাবে। অনুমোদনের পরে, চাষিরা সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ পাবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতির হানায় ফসলে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মেলে শতকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে ১,৯৮০ টাকা। কয়েক বছর আগে গলসির পুরষা গ্রামের এক চাষি হাতির হানায় ধানের ক্ষতির জন্য ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ক্ষতিপূরণ সময়ে মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ।

Advertisement

গলসির শিড়রাই গ্রামের শেখ আকাশ, শেখ লেবুদের দাবি, ‘‘হাতির হানায় ধানের ক্ষতি হবে, এটা কোনও ভাবেই ভাবিনি। অথচ, সেটাই হল। আর পাঁচ দিন পরেই ধান কাটতাম। এখন কী ভাবে ক্ষতিপূরণ পাব, সেটাই চিন্তার।’’ আউশগ্রামের আলি গ্রামের তাপস চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমার সাড়ে ১১ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। বন দফতরের কর্তারা গ্রামে এসে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু যা ক্ষতি হয়েছে, ততটাই পাব কি?’’ একই সুর নোয়াদার জগন্নাথ মণ্ডল, সিরাজ শেখদের গলায়। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা আমাদের হয়নি। কতটা ধান ঘরে আনতে পারব, কে জানে!’’ কুমারগঞ্জ, লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার চাষিদেরও আশঙ্কা, জঙ্গলের ভিতরে হাতির দল ঢুকে থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। শুক্রবারেই জঙ্গল থেকে পাকা ধানের লোভে খেতে চলে এসেছিল হাতির দল। খাওয়া শেষ করে জঙ্গলে ঢুকে যায়। হাতি জঙ্গল না ছাড়া পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে তাঁদের অনুমান।

গলসি ও আউশগ্রামের কতটা ধান শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়েছে তার হিসেব করেছে কৃষি দফতর। আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিল্বগ্রাম, দিগনগর ১, গুসকরা ২ পঞ্চায়েতের আটটি মৌজায় হাতির হানায় দেড় হাজার হেক্টর ধানে ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তাঁরা। গলসির চারটে পঞ্চায়েতের ১৪টি মৌজায় ২৫০ হেক্টর ধানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি দফতরের আধিকারিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক হিসেব সংশ্লিষ্ট ব্লক-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের জানানো হয়েছে।

কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চার হাজার চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। হাতির হানার জন্য শস্যবিমারও কোনও ব্যাপার নেই। বন দফতরই পুরো ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখবে।’’ এডিএফও সারদা সাহা জানান, কৃষি দফতর থেকে রিপোর্ট নেওয়ার বিষয় নেই। চাষিরা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করবেন। তা খতিয়ে দেখে সরাসরি ক্ষতিপূরণ পাবেন চাষিরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement