এখন মজুত আলুর বন্ড বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২৫ টাকায়।—ফাইল চিত্র।
ফলন কমলে উঠবে দর। পাটের ফলন ও বাজার দেখে এই ‘ধারণা’ এ বার আর মেলানো যাচ্ছে না বলে দাবি পূর্ব বর্ধমানের চাষিদের। শুধু তাই নয়, আলু মজুত বেশি থাকায় দর নেই তারও। চাষিদের দাবি, এই দুই প্রধান অর্থকরী ফসলের দর না থাকায় এ বার জেলা জুড়েই চাষে ক্ষতি হতে পারে।
জেলা কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানে ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হয়। দিন কয়েক ধরে পাট পচানো, কেউ কেউ পাট বিক্রিও করছেন বলে চাষিরা জানান। বাজারে গিয়েই চোখ কপালে উঠছে চাষিদের। কালনার চাষি নিজাম শেখ জানান, গত মরসুমে কুইন্ট্যাল প্রতি পাটের দাম ছিল ৫২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। এ বার তা ঠেকেছে মাত্র ২২০০ টাকায়। অথচ, জেলার সহ কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের দাবি, ‘‘টানা মেঘলা আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলন এ বার কিছুটা কমেছে।’’ চাষিদের দাবি, সেই ফলন, গত বারের তুলনায় বিঘা প্রতি জমিতে গড়ে এক কুইন্ট্যাল কম হয়েছে।
তার পরেও কেন এমন হাল? চাষিদের সঙ্গে কথা বলে মূলত দু’টি কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত, গত বার বেশি দাম পাওয়ার আশায় বেশ খানিকটা বেশি দরে পাট কিনে তা মজুত করেছিলেন ফড়েরা। কিন্তু তার পরেও দর ওঠেনি পাটের বাজারে। সেই ক্ষতি এ বারেও যাতে না হয়, তাই ফড়েরা পাট কিনতেই তেমন আগ্রহী নন বলে জানান চাষিরা। দ্বিতীয়ত, বর্ধমানে ফলন না হলেও দক্ষিণবঙ্গে অন্যান্য জেলাগুলিতে পাটের ফলন ভালই হয়েছে বলে দাবি কৃষি দফতরের। ফলে পাটের বাজারে ঘাটতি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে জেলার চাষিরা জানান, তাঁদের বিঘা প্রতি জমিতে গড়ে পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
বাজারে পাটের মতোই আলুরও দর মিলছে না বলে দাবি চাষিদের। আলু চাষি সাদ্দাম শেখ জানান, এ বার মরসুমের শুরুতে আলুর দর ছিল, বস্তা পিছু দুশো টাকা। সেই দর উঠবে ভেবে অনেকেই হিমঘরে আলু মজুত করেন। কিন্তু সেই মজুতের পরিমাণ চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি আলু ব্যবসায়ীদের। আলু ব্যবসায়ী ইদের আলি মোল্লা জানান, এখন মজুত আলুর বন্ড বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২৫ টাকায়।
চাষিদের দাবি, এই পরিস্থিতি সামলাতে সরকার পদক্ষেপ না করলে চাষিদের লোকসান আরও বাড়বে। জেলা কৃষি ও কৃষক বাঁচাও কমিটির তরফে অনিরুদ্ধ কুণ্ডু বলেন, ‘‘আলু চারশো টাকা সহায়ক মূল্যে কেনার জন্য জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছি। পাট-চাষিদের বিষয়টি নিয়েও সরব হব।’’