জমির মালিকানা বদল হয়নি, শ্লথ ‘কৃষক বন্ধু’

জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই জেলার চাষিদের একটা বড় অংশই সম্ভ্রান্ত। অনেকেই বাইরে থাকেন। জমি চাষ করেন বর্গাদার বা স্থানীয়েরা। ফলে, ওই সব চাষিদের প্রকল্পের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সময় নেই জমির মালিকদের অনেকের।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

শস্য বিমা করার জন্য চাষিরা উৎসাহী। কিন্তু রাজ্যের প্রকল্প ‘কৃষক বন্ধু’-তে নাম তুলতে জেলার চাষিরা খুব একটা উৎসাহী নন—অন্তত এমনই তথ্য রয়েছে প্রশাসনের কাছে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নাম নথিভুক্ত না হলে চাষিরা টাকা পাবেন কি করে?”

Advertisement

ওই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানান, প্রথম দিকে মাত্র ৩৫ শতাংশের নাম নথিভুক্ত করা গিয়েছিল। এখন ধাপে ধাপে সেটা বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। তাঁর আশা, এই মাসে তা ৬০ শতাংশ হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৫৩.১ শতাংশ চাষির নাম এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২৪ অগস্ট পর্যন্ত শস্য বিমা ও ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন যথাক্রমে ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮৯১ জন ও ২ লক্ষ ৪২ হাজারের সামান্য বেশি সংখ্যক চাষি।

কিন্তু এই প্রকল্পে উৎসাহ কম কেন? প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, “চাষিদের কাছে পরচার কাগজ নেই বলে তাঁরা নাম নথিভুক্ত করাতে পারছেন না।’’ কৃষি দফতরেরও দাবি, বেশির ভাগ চাষিরই জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়নি। জমির ‘রেকর্ড’ সংশোধন না করলে কোনও চাষি ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে নাম তুলতে পারবেন না। গলসির চাষি সামসুদ্দিন খান, ভাতারের হবিবুল্লাহ শেখ কিংবা মেমারি স্বপন সিংহদের দাবি, “বিএলএলআরও দফতরে গিয়ে জমির মালিকানা সংশোধন করাতে গেলে চটির সুকতলা ক্ষয়ে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও সে কাজ হয় না।’’

Advertisement

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী অবশ্য জানান, মার্চে টানা দু’সপ্তাহ জেলায় বিশেষ শিবির করা হয়। সেই সময়ে মাত্র ২৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল! প্রদীপবাবুও জানান, পরচা তৈরির কাজ ধীর গতিতে হত। মুখ্যমন্ত্রী, এ নিয়ে জেলায় জেলায় বিশেষ শিবির করার জন্য নির্দেশ দেন। তাঁর কথায়, “পুজো চলে এল। কাজ কম থাকবে। এই ফাঁকে শিবিরগুলো করা ভাল।’’

কৃষিকর্তাদের দাবি, পরচার সমস্যা ছাড়া, প্রথম দিকে পোর্টাল খুলতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ফলে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে নাম তোলাতে পারেননি অনেক চাষিই। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই জেলার চাষিদের একটা বড় অংশই সম্ভ্রান্ত। অনেকেই বাইরে থাকেন। জমি চাষ করেন বর্গাদার বা স্থানীয়েরা। ফলে, ওই সব চাষিদের প্রকল্পের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সময় নেই জমির মালিকদের অনেকের।’’

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাম নথিভুক্ত করার পরেও এখনও লক্ষাধিক চাষি ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের টাকা পাননি। জেলায় এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৫ হাজার চাষিকে ‘কৃষক বন্ধু’র সুবিধা দেওয়ার জন্য অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে চেক পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার চাষি। কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেশ কয়েক হাজার চেক তৈরি করেছে বর্ধমান সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। সেই চেকগুলি দ্রুত চাষির হাতে তুলে দেওয়া হবে। ক্রমাগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement