Murder

Murder: ‘দলের চেনা লোক’ জড়িত, সন্দেহ স্ত্রীর

নিহতের পরিজনের দাবি, ঘটনার পিছনে অসীমবাবুর পরিচিত দলের লোকজনের একাংশ রয়েছে বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৬:৪১
Share:

লাখুরিয়ায় শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

বিপত্তারিণী পুজো ছিল মঙ্গলবার। সে জন্য ফল-মিষ্টি কিনে সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি, অসীম দাস। কিন্তু গ্রামে ঢোকার মুখেই গুলিতে প্রাণ হারাতে হয় তাঁকে। তৃণমূল নেতারা এই কাণ্ড ‘বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা’ ঘটিয়েছে বলে দাবি করলেও, মঙ্গলবার নিহতের পরিজনের দাবি, ঘটনার পিছনে অসীমবাবুর পরিচিত দলের লোকজনের একাংশ রয়েছে বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন।

Advertisement

অসীমবাবুর স্ত্রী মনিকাদেবী এ দিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ আমার স্বামী মোটরবাইক নিয়ে ব্যবসার কাজের জন্য কাশেমনগরে যান। সেখানে কাজ মিটিয়ে গোতিষ্ঠা থেকে পুজোর ফল কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন দলের চেনা লোকজনই কাছ থেকে খুন করেছে বলে আমাদের অনুমান।’’ যদিও নিহতের ছেলে সুনন্দ দাস পুলিশের কাছে যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, তাতে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ আততায়ীদের কথা লেখা হয়েছে। পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, পুরোটাই তাঁদের সন্দেহ। তাই নির্দিষ্ট কারও নাম দেওয়া হয়নি।

কাটোয়া হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ নেতার দেহ গ্রামে আনা হয়। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। আজ, বুধবার বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মঙ্গলকোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনুব্রত মণ্ডল শোর্কাত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

Advertisement

ঘটনাস্থলে এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশ পাহারায় রয়েছে। কিছুটা দূরেই, সিউর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় পেশায় আলু ব্যবসায়ী অসীমবাবুর দোতলা পাকা বাড়ি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ছেলে-বৌমাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। বাড়ির সামনে নিজের জায়গায় দলের কার্যালয় তৈরি করেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, মাস দু’য়েক আগে লাখুরিয়ায় দলের আর একটি অফিসও খুলেছিলেন অসীমবাবু।

পরিবারের দাবি, দলে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরে বারবারই আক্রান্ত হয়েছেন অসীমবাবু। বছর চারেক আগে এক রাতে তাঁর বাড়িতে হামলা, বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে লাগোয়া গ্রামের কিছু তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। ফের হামলার আশঙ্কায় ঘরে কাঠের দরজার উপরে আলাদা করে শাটার বসানো হয়। বছর দু’য়েক আগে খতিয়ার বাসস্টপের কাছে অসীমবাবুকে রাস্তা বেধড়ক মারধর করে কিছু দুষ্কৃতী। সেই ঘটনাও দলের ‘দ্বন্দের’ ফল বলেই অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের দাবি, এ নিয়ে দলের অন্দরে নিরাপত্তার অভাব বোধের কথাও জানান অসীমবাবু।

গ্রামের বাসিন্দা তপন দে, বিজয় মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘বাড়িতে হামলার পরে অসীম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। তাই বাড়িতে ঘরগুলির দরজায় শাটার বসান। কয়েকবার আক্রান্তও হন। তখনই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে অকালে প্রাণটা যেত না!’’ ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন গোতিষ্ঠায় তৃণমূলের কিছু কর্মী বিক্ষোভ দেখান।

এ দিন সকালে বারান্দায় বসে অঝোরে কাঁদছিলেন অসীমবাবুর মা, বছর বিরাশির ঝর্নাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘বিপত্তারিণী পুজোর জন্য ছেলেকে ফল আনতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের যে এত বড় বিপদ ঘনিয়ে আসছে, কল্পনাও করিনি। বছর ছয়েক আগে আমার স্বামী মারা যান। তিনি ছেলেকে রাজনীতি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ছেলের কাছে পরিবারের থেকে দলই বড় হয়ে উঠেছিল। ওরা আমার ছেলেটাকে বাঁচতে দিল না!’’ পাশের ঘরে অসীমবাবুর স্ত্রী মনিকাদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। ঘিরে রয়েছেন আত্মীয়-স্বজনেরা। অসীমবাবুর দিদি তাপসী সরকার, মামা সুবোধ মিত্র–সহ পরিজনদের অনেকেই দাবি করেন, ‘‘বিরোধী দল নয়, তৃণমূলের চেনা লোকজনই খুন করেছে।’’ যদিও এ দিন পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগে কারও নাম জানানো হয়নি।

জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি (মঙ্গলকোট) রাণাপ্রতাপ গোস্বামীর দাবি, “আমরা গোড়া থেকেই বলছি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছে। পরিবার ও গ্রামের লোকজনও একই কথা বলছেন। তৃণমূল ঘৃণ্য রাজনীতি করতে আমাদের দলের নাম জড়াচ্ছে।’’ মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, “অসীম আমাদের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। শোকার্ত পরিবার এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই বলে হয়তো সঠিক ব্যাখা দিতে পারেনি। বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুনে জড়িত। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement