কালনায় উদ্বেদে সৈফের পরিবার। — নিজস্ব চিত্র।
ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া কালনার নাদনঘাট পঞ্চায়েতের ঘোলা এবং পিন্ডিরা পঞ্চায়েতের আঙ্গারসন গ্রামের তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে এটিএস (অ্যান্টি টেররিজ়মম স্কোয়াড), বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করেছে ওই পরিবারগুলি। বরাবর নির্বিবাদী, গয়নার কাজে যাওয়া তিন যুবককে কী কারণে তাঁদের গ্রেফতার করা হল, তা নিয়ে উদ্বেগে তাঁরা। মঙ্গলবার থেকে যোগাযোগও করা যায়নি তাঁদের সঙ্গে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, গ্রেফতারের কথা তাঁরা শুনেছেন। খোঁজখবর করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারে নয় বলে এর থেকে বেশি বলতে চাননি তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে কালনা ২ ব্লকের আঙ্গারসন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বছর বাইশের সৈফ নেওয়াজকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে। এলাকার মানুষের দাবি, অত্যন্ত ভাল, শান্ত, ধর্মভীরু ছেলে সৈফ। বছর তিনেক হল গুজরাটে গয়না তৈরির কাজ করছেন তিনি। প্রথমে জেতপুরে কাজ করতেন। মাস ছ’য়েক আগে দোকানের মালিক তাঁরই রাজকোটের দোকানে পাঠান তাঁকে। এলাকার বাসিন্দা হাবিব সরকার, আকতার সরকাররা বলেন, ‘‘কাজের জন্য এলাকার প্রায় ৩০ জন ছেলে গুজরাটে রয়েছে। সৈফ ছোট থেকে কোনও ঝামেলায় জড়াইনি। ওঁকে জঙ্গি সন্ধেহে গ্রেফতার করা হয়েছে, ভাবতে পারছি না।’’ বাইরে কাজ করা অন্য যুবকেরাও এই ঘটনায় আতঙ্কিত, দাবি তাঁর। সৈফের বাবা আবু সাহিদ গ্রামে একটি ছোট্ট কাপড়ের দোকান চালান। তিনি বলেন, ‘‘অর্থাভাবের কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ছেলেকে কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার জানতে পারি ছেলেকে এটিএস গ্রেফতার করেছে। আর যোগাযোগ করতে পারিনি। কেন যে এমন হল, বুঝতে পারছি না।’’ আঙ্গারসন উচ্চবিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে সৈফের বাড়ি। ওই স্কুলের শিক্ষক সুব্রত বিশ্বাস, প্রদীপ বিশ্বাসেরাও জানান, নম্র, ভদ্র ছেলে বলেই পরিচিত ছিল সৈফ।
নাদনঘাট পঞ্চায়েতের ঘোলা গ্রামে অ্যাসবেসটসের চাল দেওয়া ঘরের সামনে ছেলে সুকুর আলি শেখের জন্য কেঁদেই যাচ্ছিলেন মা ডালিয়া শেখ। তিনি জানান, ছেলে পাঁচ বার নমাজ পড়ত। মাস ন’য়েক আগে রাজকোটে কাজে যায়। প্রথমে গয়না তৈরি, পরে একটি মুদিখানা দোকানে কাজ শুরু করে। ‘‘১৯ বছরের ছেলেটা কী এমন করল কে জানে! আল্লা জানেন, ছেলেটা নির্দোষ’’, বলেন তিনি।
ওই গ্রামেরই সফি নেওয়াজ ওরফে হানিফ মল্লিককেও এটিএস গ্রেফতার করেেছ বলে জানা গিয়েছে। তিনি গুজরাটে একটি গয়নার দোকানে কাজ করতেন।