যাতে নিরাপদে ইউক্রেন থেকে বাড়িতে ফিরতে পারেন দুই মেয়ে (ইনসেটে, বাঁ দিকে রুমকি ও ডান দিকে, ঝুমকি), সে জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন বাবা- মা। রবিবার দুর্গাপুরের রাতুড়িয়ায়। ছবি: বিকাশ মশান
ইউক্রেনের খারকিভে ‘গ্রাউন্ড ইনভেশন’ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই আপাতত বেরোনোর সব পথ বন্ধ। তবে এ রাজ্যের দুর্গাপুরের রাতুড়িয়ার দুই যমজ বোন রুমকি ও ঝুমকি নিরাপদেই হস্টেলের ‘বেসমেন্ট’-এর অস্থায়ী বাঙ্কারে রয়েছেন। রবিবার এ কথা জানালেন, তাঁদের বাবা-মা ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় ও সুনন্দা। তাঁরা বলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত, ওদের দেশে ফেরার আর কোনও উপায় দেখছি না!”
রুমকি, ঝুমকি ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার দূরের খারকিভ শহরের ‘খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’তে এমবিবিএস পড়তে গিয়েছেন ২০২১-এর ৮ ডিসেম্বর।
সুনন্দা স্বাস্থ্যকর্মী। ধীরেন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থার অস্থায়ী কর্মী। তাঁরা জানালেন, এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তাঁদের দুই মেয়ে। কলেজের হস্টেলে থাকেন। যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিন থেকেই তাঁদের ঠাঁই হয়েছে বেসমেন্টে। সেখানেই গাদাগাদি করে রয়েছেন হস্টেলের সবাই। উপরে ওঠা বারণ। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে খাবার ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ভিডিয়ো কলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ চলছিল।
তবে শনিবার থেকে পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গিয়েছে। মোবাইলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ এক বার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয় দুই বোনের। তাঁরা বলেন, “শহরের ভিতরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর দেশে ফেরার আপাতত কোনও উপায় নেই।” মা সুনন্দা বলেন, “ওখানে সবাই চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যুদ্ধ শেষ না হলে, আর বোধ হয় ওরা ফিরতে পারবে না! খাবার ও পানীয় জলের জোগান কতটা স্বাভাবিক থাকবে, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। কী যে হবে, মেয়েদের কথা ভেবে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছি।”
তবে রবিবার সকালে কর্মসূত্রে পোল্যান্ডে বসবাসকারী পরিচিত এক জনের মাধ্যমে মেয়েদের খবর পেয়েছেন রাতুড়িয়ার গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতি। তিনি দীননাথ মল্লিক। তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন ইউক্রেনে। দীননাথ বলেন, “ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। কিভে তিন জন বন্ধু রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও লাগাতার যোগাযোগ রয়েছে। খারকিভে ‘গ্রাউন্ড ইনভেশন’ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই আপাতত বেরোনোর আর কোনও রাস্তা নেই। তবে শেষ পাওয়া খবর, রুমকি-ঝুমকি ভাল আছে।” সেই সঙ্গে তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়াতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে, খারকিভে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তাই রুমকি-ঝুমকির সঙ্গে সব সময় হয়তো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরের ‘ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’-তে এমবিবিএস পড়তে যাওয়া ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের টেগোর অ্যাভিনিউয়ের নেহা খান ও বেনাচিতির জিন্নত আলম রবিবার সকালে রোমানিয়া থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে করে দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।