বাড়িতে ছেলেদের সঙ্গে মালতীদেবী। নিজস্ব চিত্র
চারিদিকে সাজো সাজো রব। উৎসবের গন্ধ। রংবেরঙের আলোয় সেজে উঠেছে পথঘাট। নতুন জামাকাপড় গায়ে চাপিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। কিন্তু মালতী পালের কাছে এ সব মূল্যহীন। দুর্গাপুজোর আনন্দে সামিল হওয়ার সময় নেই মঙ্গলকোটের যজ্ঞেশ্বরডিহি গ্রামের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা মালতীদেবীর। তাঁর একটাই চিন্তা কী ভাবে দু’বেলা দু’মুঠোখাবার জুটবে।
অশীতিপর মালতীদেবীর দুই ছেলে সঞ্জয় ও ধনঞ্জয়। অপুষ্টিজনিত রোগের জেরে দুই ছেলেই যুবক বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। এই অবস্থায় কেউ চাল দিলে ভাত জোটে। নয়তো এক পেট খিদে নিয়ে ঘরের মেঝেয় মুখ গুঁজে শুয়ে থাকা ছাড়া এই গরিব পরিবারের অন্য কোনও উপায় নেই।
ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, দোচালার দুকুঠুরি বাড়ির শরীরেও দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। তক্তপোশের নীচে কালি পড়া বাসি ভাতের হাঁড়ি পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে নিত্য ব্যবহার্য ভাঙাচোরা বাসনপত্র। মাটির উনুনের চেহারা দেখে বোঝা যায় রান্না এই সংসারে অনিয়মিত। মালতীদেবীর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘কেউ দিলে খাবার জোটে। না দিলে দুই ছেলেকে নিয়ে খালি পেটে ঘরের কোণে পড়ে থাকি। ভিক্ষে করার মতো শরীরে বল নেই!’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মালতীদেবীর পরিবারে অভাব-অনটন শুরু হয় বছর সাতেক আগে। ২০১১ সালে তাঁর স্বামী শ্যাম পালের মৃত্যু হয়। এর পরেই অভাব চরমে পৌঁছয়। ভেঙে পড়া ঘর সংস্কারের জন্য শেষ সম্বর বিঘে দেড়েক কৃষিজমি বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল উনুনে হাঁড়ি ওঠে। মালতীদেবী জানান, এক বার এক আত্মীয় এক হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পঞ্চয়েতে জমা দিয়ে নির্মলবাংলা প্রকল্পে একটি শৌচাগার পেয়েছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পড়শি ব্যবসায়ী ননীচূড়া ঘোষ। তিনি প্রায়ই চাল দিয়ে সাহায্য করেন বলে এখন আধপেটা খাবার জুটছে বলে জানালেন মালতীদেবী। ধনঞ্জয়ের কথায়, ‘‘পেটের খিদেই মেটে না। তাই উৎসব আলাদা কোনও আনন্দ দেয় না!’’
ননীচূড়াবাবু বলেন, ‘‘তাঁরা যাতে সরকারি সাহায্য পান সে জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানানো হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক সৌমেন পাল বলেন, ‘‘ওই পরিবারের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেব।’’