উদ্ধার হওয়া জিনিস। নিজস্ব চিত্র
রান্নার মশলায় মেশানো হতো ধানের তুষ, আতপ চালের গুড়ো এমনকি ক্ষতিকারক রাসায়নিক রং। পরে প্যাকেটবন্দি সেই মশলা চলে যেত রাজ্যের নানা প্রান্তে। পূর্বস্থলীর বড়ডাঙায় একটি কারখানায় হানা দিয়ে এমনই ভেজাল চক্রের হদিস পেল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কারখানার মালিক আনসার শেখ ও ম্যানেজার মৃণালকান্তি রায়কেও। কারখানাটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসটিকেকে রোডের ধারে ওই গুদামে মজুত নানা ধানের তুষ, চালের গুঁড়ো সঙ্গে ন্যূনতম জিরে, হলুদ বা ধনে মিশিয়ে পেষাই করে মশলা বানানো হত। বছর দশেক ধরে চলছিল ওই কারবার। কলকাতার বিভিন্ন বাজার থেকে রাসায়নিক ও এলাকার চালকলগুলি থেকেই ধানের কুঁড়ো জোগাড় করা হত, দাবি পুলিশের। অভিযানে ৪০ কেজি ওজনের ন’বস্তা তুষ, সাত কেজি রাসায়নিক পাউডার, ৬০ কেজি ওজনের পাঁচ বস্তা সাদা গুড়ো, ২৫ কেজি আতপ চাল, ১১ বস্তা লঙ্কার খোসা, ৫০ কেজি ওজনের লঙ্কার বীজের ১২টি বস্তা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও গুদামের মেঝে থেকে উদ্ধার হয় চার কুইন্টাল লাল রঙের গুড়ো এবং দুটি যন্ত্র। এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী জানান, এলাকার আরও একটি কারখানা থেকেও ভেজাল মশলার উপকরণ মিলেছে। সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের দাবি, বড়ডাঙার পাশাপাশি খড়দত্তপাড়া, হাঁপানিয়া, গাছা-সহ কয়েকটি এলাকায় এই ধরনের ভেজাল কারখানা আরও রয়েছে। বেশ কিছু কারবারে জড়িয়ে আছে দুষ্কৃতীরাও। তাদের ভয়ে সাধারণ বাসিন্দারা অভিযোগও জানান না সব সময়। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হত ওই মশলা। পুলিশের দাবি, ধৃত আনসারকে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।
এ দিন ধৃত আনসার এবং মৃণালকান্তিকে কালনা আদালতে তোলা হলে মৃণালবাবুর জামিন মঞ্জুর হয়। আদালতে আনসারের এক আত্মীয় ইদু শেখ দাবি করেন, দাদাকে কয়েকজন চক্রান্ত করে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এলাকায় মোট ১৩টি ভেজাল মশলার কারখানা রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই জানান ভেজাল মশলা থেকে কিডনির মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। হজম প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি, মৃত্যুও ঘটতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, ভেজাল মশলার কারবার বন্ধ করতে আরও অভিযান চালানো হবে।