দুর্ঘটনা বাড়ছে অজয় নদীতে। —নিজস্ব চিত্র।
গত তিন বছরে এলাকায় ডুবে মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। এ বছর পুজোতেও তলিয়ে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে এক নাবালিকার। বার বার এমন দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না— সোমবার অজয়ে বীরভূমের ভীমগড় ঘাটে নবম শ্রেণির ছাত্রের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে এমনই অভিযোগ পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের বাসিন্দাদের অনেকের। তাঁদের দাবি, নদ থেকে বালি চুরির ফলে ওই জায়গায় বড় গর্ত তৈরি হয়ে রয়েছে। সে কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সে নিয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, ক্ষোভ তাঁদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উখড়া সারদাপল্লি থেকে এ দিন সাতটি পরিবারের মোট ২২ জন সদস্য পাণ্ডবেশ্বর লাগোয়া ভীমগড় ঘাটে স্নান করতে গিয়েছিলেন। নবম শ্রেণির পড়ুয়া মৃদুল বার্নওয়াল আরও তিন কিশোরের সঙ্গে অভিভাবকদের সামনেই স্নানে নামে। হঠাৎ চার জন তলিয়ে যেতে শুরু করে। এক কিশোরের বাবা বিজয় বার্নওয়াল জানান, চোখের সামনে হঠাৎ ওদের তলিয়ে যেতে দেখে তিনি জলে ঝাঁপ দিয়ে দু’জনকে তুলে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু হঠাৎ আমি নিজেই জ্ঞান হারাই। স্থানীয় বাসিন্দারা বাকি তিন জনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু মৃদুল তলিয়ে যায়। আমার সঙ্গে তিন জনকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।’’ তাঁর দাবি, ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, হঠাৎ তাদের পায়ের তলার বালি সরতে শুরু করায় ও জলের স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তারা তলিয়ে যাচ্ছিল।
পাণ্ডবেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা, শিক্ষক মহেশ মণ্ডল দাবি করেন, কয়েক বছর ধরেই এই এলাকায় অজয়ের জলের গতিপথ ভীমগড়মুখী হয়ে গিয়েছে। তাতে পাণ্ডবেশ্বরের ঘাটে বর্ষার পর থেকে জল কমতে শুরু করে। শীতের শুরুতে স্নান করার মতো জল থাকে না। তাই এ দিকের মানুষজন উল্টো দিকে ভীমগড় ঘাটে চলে যান। ভীমগড়ের বাসিন্দা প্রিয়নাথ সাহা, রমেশ মণ্ডলদের অভিযোগ, বছর চারেক আগে থেকে ঘাটের কাছে নদে হ্রদের মতো গর্ত তৈরি হয়েছে। তার গভীরতাও বেশি। তাঁদের দাবি, সচেতনতা প্রচারের অভাবে তিন বছরে সাত জনের ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এ বছর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন পুজোর দোলা আনার সময়ে এলাকার এক নাবালিকার ডুবে মৃত্যু হয়। বাকি ছ’জন পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের বাসিন্দা। এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসন থেকে স্নান করা নিয়ে সচেতনতা প্রচারের ব্যবস্থা করা হোক।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নদে এমন গর্ত হওয়ার কারণ অবৈধ ভাবে বালি তোলা। তাঁদের দাবি, ঘাট থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে একটি বৈধ ঘাট আছে। কিন্তু শ’তিনেক মিটার দূরে বেলডাঙায় অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে রীতিমতো নৌকায় যন্ত্র বসিয়ে। স্নানের ঘাটেও যন্ত্রের সাহায্যে জলের নীচ থেকে বালি তুলে নেওয়ায় যেখানে সেখানে গভীর গর্ত তৈরি হচ্ছে। তাই ঘাট ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
এ দিন ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি জানান, নদে স্নান করতে গেলে কী ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন, তা প্রচার করা হবে। বীরভূমের খয়রাশোলের বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বেআইনি ভাবে বালি তোলার কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্লকে প্রশাসন, ভূমি দফতর ও পুলিশকে নিয়ে কমিটি আছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে কমিটি।