রাধাগোবিন্দ মন্দিরে। নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহখানেক ধরে প্রস্তুতি চলছিল। প্রথমে ঠিক, বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ সভামঞ্চে পৌঁছবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। কিন্তু তার প্রায় এক ঘণ্টা পরে, জগদানন্দপুর গ্রামের আকাশে দেখা যায় নড্ডার হেলিকপ্টার। উল্লাসে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।
শনিবার সকাল ৯টা থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলার নানা প্রান্ত থেকে বাস ও মালবাহী গাড়িতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আসতে দেখা যায়। ভিন্ জেলা থেকেও বাজনা নিয়ে সভায় হাজির হন অনেকে। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজেপি নেতাদের দাবি, প্রায় ৭০ হাজার লোক এসেছিলেন। তবে পুলিশের হিসেবে, সংখ্যাটা ২৫ হাজারের আশপাশে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাসের নেতৃত্বে পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। প্রচুর সংখ্যক পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার নানা জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছিল।
জগদানন্দপুর গ্রামে রাধাগোবিন্দ মন্দিরের মাঠে হেলিপ্যাড ঘিরে মুস্থুলি, ঘোড়ানাষ, আমডাঙা গ্রামের বহু মানুষ ভিড় জমান। বাঁশের ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও ভিড় সামাল দিতে পুলিশকর্মীরা হিমসিম হন। রাস্তার দু’পাশ ছাড়াও নানা বাড়ির ছাদে মানুষজন অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ হেলিপ্যাডে নামেন নড্ডা। মাঠের কিছুটা অংশ ঘুরে জনতার দিকে হাত নেড়ে রাধাগোবিন্দ মন্দিরে পুজো দিতে যান। দলের তরফে মহিলা ঢাকির দল, সাধুরা খোল-করতাল বাজিয়ে সম্মান জানান। মন্দির থেকে প্রায় ১৫ মিনিট পরে সভামঞ্চে পৌঁছন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুনীল মণ্ডলেরা। প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন নড্ডা। তৃণমূলের সরকারকে আক্রমণ ও কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে বলে নানা তথ্য দিয়ে দাবি করেন তিনি।
দুপুর ২টো নাগাদ মুস্থুলি গ্রামের উত্তরপাড়ায় পাঁচ কৃষক পরিবারের কাছে গিয়ে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’-এর অঙ্গ হিসেবে চাল-আনাজ সংগ্রহ করেন নড্ডা। পরে কৃষক মথুরা মণ্ডলের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সঙ্গে ছিলেন দিলীপবাবু, রাহুল সিংহ, বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা সাংসদ সুনীল মণ্ডল। এর পরে চেয়ারে বসে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সওয়া ৩টে নাগাদ নড্ডা বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা দেন।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘এ দিনের সভায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। বাংলায় যে পরিবর্তন হতে চলেছে, এ দিন সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।’’ কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত কৃষিনীতির জন্যই দিল্লির রাস্তায় কৃষকেরা আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন। আর এখানে জে পি নড্ডা কৃষক সুরক্ষা অভিযানের নামে ভাঁওতা দিতে এসেছিলেন। বাংলার মানুষ এ সব মেনে নেবেন না। ভোটেই ওদের জবাব দেবেন।’’