মলয় ঘটক। — ফাইল চিত্র।
কয়লা পাচারের মামলায় রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটককে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে তাদের সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে, দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। বিষয়টি নিয়ে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি মলয়ের। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ‘চুপ’ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এ নিয়ে সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা।
ইডি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি বেশ কয়েক বার নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও মলয় তদন্তকারীদের মুখোমুখি হননি। ১৪ সেপ্টেম্বরের ডাক বিষয়ে মলয়ের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁকে ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি এসএমএস-এরও। তবে মলয়-ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, ইডি মলয়কে এমন কোনও ডাক পাঠিয়েছে বলে মন্ত্রী জানেন না। ঘটনাচক্রে, কলকাতার দুর্গা পুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ দিন আসানসোলে যে পদযাত্রা হয়, সেখানে যোগ দিতে দেখাগিয়েছে মলয়কে।
যদিও, ইডি-র ডাকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে, সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “কয়লা-কাণ্ডে মলয় হলেন কান। তাঁকে টানলেই মাথাদের নাম সামনে আসবে। উনি এবং ওঁর দলের লোকজনের ভয় এখন এটাই।”
ঘটনাচক্রে, তৃণমূলে থাকাকালীন জিতেন্দ্র তিওয়ারি বরাবরই মলয়ের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত ছিলেন। তবে এখন জিতেন্দ্র বিজেপির নেতা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বিষয়ে জিতেন্দ্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “তৃণমূল দলটাই দুর্নীতিতে ভরা। নিজেকে স্বচ্ছ মনে করলে, মন্ত্রীর ইডি-র মুখোমুখি হওয়া দরকার।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর আবার তোপ, “কয়লা-কাণ্ডে জেলার তৃণমূলের মাথারা যে জড়িত, সেটা সবাই জানেন।”
এ দিকে, দলের সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগাযোগ নেই বলেই দাবি করেছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন। তবে মন্ত্রীকে ইডি-র ডাক সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” ঘটনাচক্রে, শিবদাসনের মতোই জেলা তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাই বিষয়টি নিয়ে দিনভর চুপ থেকেছেন। তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক তথা মলয়ের ভাই অভিজিৎ ঘটক থেকে মলয়-ঘনিষ্ঠ হিসেবে জেলার রাজনীতিতে পরিচিত পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী— কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
তবে, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছেন, পুরো বিষয়টির দিকে তাঁরা অত্যন্ত সতর্ক নজর রাখছেন। কারণ, জেলায় দলের সব থেকে বড় নেতা এবং পুরনো সংগঠক হলেন মলয়। এক কথায় জেলায় দলের মুখ এখনও পর্যন্ত মলয়ই। ফলে, ইডি-র ডাককে কেন্দ্র করে কোনও রাজনৈতিক উথালপাথাল হলে, তার প্রভাব পড়তে পারে দলের একেবারে তৃণমূল স্তরে। তাই এই মুহূর্তে তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে ‘চুপ’ থাকাই শ্রেয় বলেমনে করছেন।