মাকে তালা দিয়ে বেড়াতে গেল মেয়ে-জামাই, জানলা দিয়ে খাবার চাইলেন বৃদ্ধা

আনন্দপুরে ৯৬ বছরের বৃদ্ধা সবিতা নাগকে বাড়িতে তালাবন্দি রেখে আন্দামানে বেড়াতে গিয়েছিলেন ছেলে-বউমা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৮
Share:

রুদ্ধ: তখনও তালা খোলেনি বাড়ির। বাইরে পড়শিরা। দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপে। মঙ্গলবার। ছবি: বিকাশ মশান

বাড়িতে বৃদ্ধা মা-কে তালাবন্দি রেখে চলে গিয়েছে সন্তান। বিপাকে পড়েছেন মা। কলকাতার আনন্দপুরের পরে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপে ঘটল প্রায় একই ধরনের ঘটনা।

Advertisement

আনন্দপুরে ৯৬ বছরের বৃদ্ধা সবিতা নাগকে বাড়িতে তালাবন্দি রেখে আন্দামানে বেড়াতে গিয়েছিলেন ছেলে-বউমা। ডিএসপি টাউনশিপের বি-জো়নে বিদ্যাপতি রোড এলাকার একটি আবাসনে ৭৪ বছরের বৃদ্ধা দেবযানী কুমারকে ছ’দিন ধরে তালাবন্ধ রেখে আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান তাঁর মেয়ে–জামাই। ঘটনার জেরে বৃদ্ধার মেয়েকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে পড়শি মহিলাদের একাংশের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বার্নোয়াল এবং জামাই বিজয় বার্নোয়ালের সঙ্গে থাকেন দেবযানীদেবী। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পরে বছর পাঁচেক আগে ডিএসপি-তে চাকরি পান প্রিয়াঙ্কা। মঙ্গলবার সকালে জানলা দিয়ে পড়শিদের ডাকতে দেখা যায় দেবযানীদেবীকে। বলেন, ‘ঘরে কিচ্ছু নেই। একটু খাবার দাও না’। বৃদ্ধার আকুতি শুনে জড়ো হন পড়শিরা। খবর দেওয়া হয় বি-জোন ফাঁড়িতে এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরূপ মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু তালা ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় জানলার গ্রিল কাটার পরিকল্পনা করে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশকে বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ছট পুজো উপলক্ষে গত বুধবার স্বামীর সঙ্গে আসানসোলে ননদের বাড়ি যান প্রিয়াঙ্কা। অভিযোগ, মায়ের জন্য ঘরে সামান্য কিছু খাবার রেখে তাঁরা বাইরে থেকে আবাসনের তালাবন্ধ করে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পড়শিদের বক্তব্য, ‘‘মাসিমা বারবার বলছিলেন, ‘খাবার শেষ হয়ে গিয়েছে। ঘরে কিচ্ছুটি নেই’। বুড়ো মানুষটার উপরে এমন অত্যাচার কেন?’’ কাউন্সিলর স্বরূপবাবুর ক্ষোভ, ‘‘এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’

খবর পেয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ স্বামীর মোটরবাইকে চেপে আবাসনে আসেন প্রিয়াঙ্কা। খোলা হয় ঘরের তালা। প্রিয়াঙ্কাকে পড়শিদের কাছে দাবি করতে শোনা যায়, মাঝে এক দিন তাঁর স্বামী এসে দেবযানীদেবীকে দেখে গিয়েছেন। স্থানীয় এক যুবককে বৃদ্ধার ‘খোঁজখবর’ করার জন্যও বলে রেখেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, সে কথায় কান না দিয়ে প্রিয়াঙ্কার উপরে চড়াও হন পড়শি মহিলাদের একাংশ। তাঁদের বলতে শোনা যায়, ‘‘মা-কে খাবার না দিয়ে তুমি ননদ-প্রীতি দেখাচ্ছিলে! মা-র কিছু হলে কী হতো?’’ হেনস্থার শিকার হন বিজয়ও। বার্নোয়াল দম্পতিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের সামনে দেবযানীদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে-জামাই ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু আমার আর উপায় ছিল না।’’ পুলিশ জানায়, দেবযানীদেবীকে চিকিৎসার জন্য ডিএসপি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এমন ঘটনা যাতে ফের না ঘটে, সে জন্য মেয়ে-জামাইয়ের কাছে মুচলেকাও চাওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement