হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে লিয়াকত কারিগর (৬৪) নামে এক বৃদ্ধের। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নিমদহ পঞ্চায়েতের নাকাদহ গ্রামের ওই পরিবারের অভিযোগ, সারাক্ষণ জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আলোচনা করতেন তিনি। সেই আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
তৃণমূলেরও দাবি, এলাকায় অনেকের মধ্যে চিন্তা, ভয় রয়েছে। বারবার আশ্বস্ত করা হলেও আতঙ্ক কাটছে না। যদিও বিজেপির দাবি, পুরোটাই তৃণমূলের অপপ্রচার। কাউকে ভিটেহারা হতে হবে না।
পূর্বস্থলীর প্রত্যন্ত এই গ্রামে দু’হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ব্রহ্মাণী নদীর পারে কাঠা খানেক জমির উপরে ছোট একটি ইটের বাড়িতে স্ত্রী, দুই বৌমাকে নিয়ে থাকতেন লিয়াকত কারিগর। পাঁচ ছেলের মধ্যে তিন ছেলেই ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। অভাবের সংসারে ওই বৃদ্ধ নিজেও খেত মজুরির কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যেরা জানান, এনআরসি নিয়ে সম্প্রতি বেশ চাপে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে এলাকার বিভিন্ন জনের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। বাড়ির কাছাকাছি একটি চায়ের দোকানেও এ নিয়ে আলোচনা করতেন। অনেকে তাঁকে মনমরা হয়ে বসেও থাকতে দেখেন। রবিবার ভোরে বাড়িতে হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত বৃদ্ধের এক বৌমা ফিরোজা বিবি বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে শ্বশুরমশাই খেতে, বসতে শুধু এনআরসির কথা বলতেন। বলতেন, ‘আমাদের জমি, জায়গা তেমন নেই। এনআরসি জেরে যদি এলাকায় থাকতে না পারি তাহলে পরিবারের সকলকে নিয়ে কোথায় নিয়ে যাব’। ওই চিন্তাতেই প্রাণটা গেল।’’
এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য শেখ ফজলুল হক জানান, শনিবার ওই চায়ের দোকানে রাত ৮টা পর্যন্ত লিয়াকত কারিগরকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। কয়েকজনের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে আলোচনাও করেন। তাঁর দাবি, ‘‘এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কারও কোনও ভয় নেই। তা সত্ত্বেও অনেকে এখনও চিন্তিত। ওই চিন্তা করেই হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে লিয়াকত সাহেবের।’’ তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি আমার কাছেও এনআরসি নিয়ে দু’বার জানতে এসেছিলেন। আমি আশ্বস্ত করেছিলাম।’’ পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রদীপ সাহারও দাবি, ‘‘ওই এলাকায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এনআরসি-র সঙ্গে যোগ রয়েছে কি না তা দেখছি খোঁজ নিয়ে।’’
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘এনআরসি হলে এ দেশের স্থায়ী মুসলিম বাসিন্দাদের কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বরং এনআরসি কার্যকরী হলে অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা থাকবে না। তৃণমূল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’’