অসমাপ্ত পড়ে রয়েছে ছাত্রীদের হস্টেল। —নিজস্ব চিত্র।
সুচেতা সাহা। কাটোয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়ি পাটুলিতে। ঠিক সময় কলেজে পৌঁছতে প্রতিদিনই ঘণ্টাখানেক সময় হাতে নিয়ে বেরোতে হয় তাঁকে। তারপরেও যানজটে বেশির ভাগ দিনই ক্লাসে ঢুকতে দেরি হয়ে যায়। সুচেতার কথায়, ‘‘হস্টেল পেলে খুব ভাল হতো।’’ সুচেতার মতো ঝুনু, শতরূপা, শামিমারাও কেউ আসে দাঁইহাট, কেউ কেতুগ্রাম, কান্দরা বা পূর্বস্থলী থেকে। প্রত্যেকেরই দাবি, হস্টেলটা দরকার।
বাসিন্দারা জানান, ছাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আট বছর আগে নতুন হস্টেল ভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতায় তা থমকে রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গেল, ২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশে একটি নতুন হস্টেল ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। পুরনো নথি ঘেঁটে কলেজের অধ্যক্ষ নির্মল সরকার জানান, ২০০৬-এর ২৮ নভেম্বর ইউজিসি-র কাছে হস্টেল তৈরির জন্য আবেদন জানানো হয়। ২০০৮-র ১৫ মে আবেদন মঞ্জুর হয়। হস্টেল তৈরির জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ৬০ লক্ষ টাকা। প্রথম কিস্তিতে ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে ইউজিসি। কলেজ সূত্রে খবর তৎকালীন অধ্যক্ষ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেন। হস্টেল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করে একটি ঠিকা সংস্থা। কিন্তু দিন কয়েক যেতেই ভবনের পরিকাঠামো নিয়ে প্রচুর অভিযোগ আসতে থাকে। কলেজের কর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ, ওই নির্মীয়মাণ ভবনটির ছাদের গাঁথনি দুর্বল। নির্মলবাবুও বলেন, ‘‘এখনও ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ ও শৌচাগারের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।’’
কলেজে একটি মহিলা হস্টেল রয়েছে বটে। কিন্তু তার আসন সংখ্যা মোটে ৫০টি। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি শিক্ষাবর্ষেই কলেজে ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে হস্টেলের চাহিদাও। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৬০ জন ছাত্রী হস্টেলের জন্য আবেদন করেছিলেন। চলতি শিত্ক্ষাবর্ষে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় একশোর কাছাকাছি। এর জেরে দূর থেকে আসা ছাত্রীদের অধিকাংশেরই থাকার ঠাঁই হয় না হস্টেলটিতে। এই পরিস্থিতিতে ঠিক মতো ক্লাস করতে গেলে স্থানীয় এলাকায় ঘরভাড়া নিতে হয় বলে জানান ছাত্রীরা। কিন্তু অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেটাও সম্ভব হয় না।
কলেজ সূত্রে খবর, ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত কোনও স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকায় মহিলা হস্টেল তৈরির কাজটি কার্যত থমকে যায়। নির্মলবাবুর দাবি, তিনি যোগ দেওয়ার পর দু’বার বাকি ৩০ লক্ষ টাকার আবেদন জানিয়ে ইউজিসি-র দ্বারস্থ হন। দেখা করেন ইউজিসির পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তার সঙ্গেও। কিন্তু নির্মলবাবুর আক্ষেপ, ‘‘বাকি টাকা হাতে না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে পারছি না। নির্মীয়মাণ হস্টেলটিতে মাঝেসাঝেই অসমাজিক কাজকর্মের অভিযোগও উঠছে।’’
হস্টেল তৈরি না হওয়ায় পড়াশোনাতেও প্রভাব পড়ছে বলে জানান ছাত্রীরা। যেমন, প্রথম বর্ষের ছাত্রী অনিমা পোদ্দার বলে, ‘‘নৃসিংহপুর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা উজিয়ে কলেজে আসি। পড়াশোনার সময়টাই আখেরে মাটি হয়। ক্লাস শেষের পর লাইব্রেরিতে যাওয়ার সময়টুকুও অনেক সময় মেলে না।’’