খনি সম্প্রসারণ শুরু করতে অভিযান সালানপুরে

বাধা উড়িয়ে জমি দখলে নিল ইসিএল

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা রয়েছে এমন এলাকায় ১৯৫৭ সালের অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন আইন মেনে পাহাড়গোড়ার প্রায় ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সালানপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

বাড়ি থেকে বার করা হচ্ছে বাসিন্দাদের।বৃহস্পতিবার পাথরগোড়ায়। ছবি: পাপন চৌধুরী

খনি সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দখল নিতে গিয়ে বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়লেন ইসিএলের কর্মী-আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার সকালে সালানপুরের পাহাড়গোড়ায় পুলিশ ও র‌্যাফ নামিয়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের বার করে জমির দখল নেন খনি কর্তৃপক্ষ। ভেঙে ফেলা হয় কয়েকটি বাড়ি। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ। ইসিএল আধিকারিকেরা জানান, এর পরে খনি সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হবে।

Advertisement

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা রয়েছে এমন এলাকায় ১৯৫৭ সালের অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন আইন মেনে পাহাড়গোড়ার প্রায় ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালে। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জমির বর্তমান দাম ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসন বাবদ এককালীন টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। কিন্তু এর পরেই জমিতে বসবাসকারীরা শরিকি বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তাই তাঁরা কেউ ওই জমি থেকে উঠে যেতে চাননি বলে অভিযোগ। ফলে, মোহনপুর খনি সম্প্রসারণের কাজ থমকে থাকে।

২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ইসিএল কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করে জমির দখল নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। গত ৩ জুলাই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, জমির বর্তমান দাম ও বসবাসকারীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত অর্থ আসানসোল আদালতে জমা করে জমির দখল নিতে পারে ইসিএল। জমির দখল পেতে জেলা প্রশাসনকে সাহায্য করার নির্দেশও দেয় আদালত।

Advertisement

বাড়ি ছাড়তে নারাজ বৃদ্ধকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পাথরগোড়ায়। ছবি: পাপন চৌধুরী

ইসিএলর সালানপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘‘কোর্টের রায় হাতে পাওয়ার পরে, ১৮ অগস্ট আসানসোল আদালতে জমির দাম ও পুনর্বাসন বাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা জমা দিয়েছি আমরা। বৃহস্পতিবার জমি দখলে নিয়েছি। আর কোনও সমস্যা নেই।’’ ইসিএল কর্তারা জানান, আদালতের রায়ের পরে তাঁরা বহু বার গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের জমি খালি করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বুধবার বিকেলেও তাঁদের উঠে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তাতে কান না দেওয়ায় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ইসিএলের আধিকারিকেরা জমির দখল নিতে গ্রামে যান। র‌্যাফ ও পুলিশের বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস। প্রথমে যন্ত্র দিয়ে মুকুন্দলাল রায় নামে এক বাসিন্দার পাকা বাড়ি ভাঙতে গেলে পরিবারের লোকজন বাধা দেন। এর পরে গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। পুলিশ এবং ইসিএলের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়।

মুকুন্দবাবুর অভিযোগ, ‘‘ইসিএল এবং পুলিশ বেআইনি ভাবে আমাদের বাড়ি ভাঙছে। টাকা না দিয়েই জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ এক সময়ে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে এলাকা খালি করে দেয়। কয়েকজনকে আটকও করা হয়। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২টি বাড়ি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে চারটি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। বাকিগুলির বাসিন্দারা জমি ছেড়ে দেবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অধিগৃহীত জমিতে প্রায় ২৫ লক্ষ টন উন্নত মানের কয়লা মজুত রয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে তিন বছরের মধ্যে সমস্ত কয়লা তুলে নেওয়া হবে। এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement