ফাইল চিত্র।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। বর্ধমান থেকে কাটোয়া ব্রডগেজ ট্রেন পরিষেবা চালু হয়ে যাচ্ছে, আজ শুক্রবার থেকেই।
এত দিন বর্ধমান থেকে শ্রীখণ্ড পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনে দিনে এক জোড়া ট্রেন চলছিল। বাকি ছিল মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরত্বের (শ্রীখণ্ড থেকে কাটোয়া) কাজ। ওই দুই স্টেশনের মাঝেও ট্রেন চালুর বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে পূর্ব রেল। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পূর্ব রেলের চিফ প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজারের নির্দেশিকা অনুসারে আজ, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস থেকেই ওই শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হতে চলেছে। তার ঠিক আগেই বৃহস্পতিবার বার্ষিক পরিদর্শনে কাটোয়া স্টেশনে আসেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার হরিন্দর রাও এবং ডিভিশনাল ম্যানেজার (হাওড়া) মনু গয়াল।
২০১৪ সালে বর্ধমান থেকে বলগনা ব্রডগেজ ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল। পরের বছর থেকে বলগোনা-কাটোয়া পর্যন্ত ২৬.২২ কিলোমিটার রেলপথের গেজ পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়। গত বছর অগস্টের শেষে বর্ধমান থেকে শ্রীখণ্ড পর্যন্ত এক জোড়া ইএমইউ রেক চালু হয়। বাকি ছিল কাটোয়া পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অংশে ট্রেন চালানোর কিছু কাজ। সেই কাজও শেষ হয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে জানা যায়, অগস্ট থেকে বর্ধমান-শ্রীখণ্ড রুটে যে ট্রেনটি আসা-যাওয়া করছে, আপাতত সেটিকেই কাটোয়া অবধি আপ-ডাউনে চালানো হবে। বর্ধমানে দুপুর ২টোয় ছেড়ে সাড়ে তিনটেয় কাটোয়া ঢোকার পরে বিকেল ৪টেয় ওই ট্রেনটিই ডাউন হিসাবে কাটোয়া থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছবে।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে খুশি হলেও মাত্র এক জোড়া ট্রেন, তা-ও বিকেলের দিকে দেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রুটের নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। কাটোয়ার মৌপ্রিয়া খান, সুজিত পালদের কথায়, ‘‘রোগী থেকে অফিস যাত্রী বা কলেজ ছাত্রী, সকলেরই সকালের দিকে বর্ধমান যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই বিকেলের বদলে সকালে কাটোয়া থেকে ট্রেন চালু করলে সুবিধা হতো। অগত্যা এত দূরের পথ আমাদের সেই বাসেই যাতায়াত করতে হবে। বাস সময়ও নেয় অনেক বেশি।’’ রেল অনুমোদিত যাত্রী সংগঠনের (ডিআরইউসিসি) প্রাক্তন সদস্য আশিস রায় বলেন, ‘‘বর্ধমান থেকে বলগনা পর্যন্ত এখন ছ’জোড়া ইএমইউ রেক চলে। বর্ধমান-কাটোয়া রুটে অন্তত ১০ জোড়া রেক চালানোর দাবি রেলের কাছে আমরা জানাবো।’’
রেল সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, স্টেশনে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবেই আপাতত বেশি ট্রেন চালু করা যায়নি। শ্রীখণ্ডে যেমন অস্থায়ী স্টেশন মাস্টার। ফলে, সর্বক্ষণ তিনি স্টেশনের কাজ দেখভাল করতে পারেন না। এ ছাড়া, জাজিগ্রামের কাছে কিছুটা জমির জট এখনও কাটেনি। কাটোয়া ঢোকার আগে জাজিগ্রামের কাছে রেললাইনের উপর দিয়ে ১ লক্ষ ৩২ হাজার কিলোভোল্টের বিদ্যুতের তার গিয়েছে। নিয়মানুসারে রেললাইন থেকে বিদ্যুতের তারের দূরত্ব থাকতে হয় ন্যূনতম ১৬ মিটার। কিন্তু, এখানে সেই দূরত্ব ৮-৯ মিটার হওয়ায় নতুন করে ওই তারের জন্য দু’টি টাওয়ার তৈরি করতে হতো।
রেলের দাবি, ওই টাওয়ার তৈরির জন্য দু’দিকে প্রয়োজনীয় ৩ কাঠা করে জমি দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন জমি মালিকরা। আগে ন্যারোগেজ লাইনে ইএমইউ ট্রেন চলাচল না করায় অসুবিধা ছিল না। তখন রেললাইনের সঙ্গে তারের দূরত্ব ছিল ১১ মিটার। পরে স্থানীয়দের একাংশ ওই জায়গা মাটি ফেলে উঁচু করায় তারের সঙ্গে দূরত্ব কমে হয় ৯ মিটারেরও কম। রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার (ডব্লুবিএসইটিসিএল) বর্ধমানের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত সপ্তাহে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে দু’টির বদলে জাজিগ্রাম থেকে কাটোয়া ঢুকতে বাঁ দিকে একটি টাওয়ারই বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য যে ৩ কাঠা জমি প্রয়োজন, সেই জমির মালিকও বৈঠকে ছিলেন।
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘জমির মালিক ও বর্গাদারকে বারবার বোঝানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরেও প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হোক।’’ এই টাওয়ার তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত বিকল্প পদ্ধতিতে ট্রেন চলাচল করবে বলে রেল সূত্রের খবর। এই পদ্ধতিতে রেলপথের যে অংশে তারের সঙ্গে রেললাইনের প্রয়োজনীয় দূরত্ব নেই, সেখানে ঢোকার আগে ১২ বগির ট্রেনে থাকা ৪টি প্যান্টোগ্রাফ হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে নামিয়ে দিয়ে ট্রেন দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যাবে। যাতে প্যান্টোগ্রাফের সঙ্গে কোনও ভাবেই রেললাইনের উপর দিয়ে যাওয়া ওই হাইভোল্টেজ তারের সংযোগ না ঘটে। বর্ধমান-রামপুরহাট শাখার সাঁইথিয়া স্টেশনের কাছে এই পদ্ধতিতেই ট্রেন চলে।
এ দিন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘শীঘ্রই কাটোয়া-আমোদপুর ব্রডগেজ রেলপথেও ট্রেন চালু হবে।’’