—প্রতীকী চিত্র।
এই অর্থ-বছর (২০২৪-২৫) শেষ হতে মেরেকেটে আর দু’মাস। কিন্তু পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে প্রাপ্য টাকার এক তৃতীয়াংশ এখনও পড়ে জেলায়। জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রাপ্য টাকার ৮০% খরচ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা। ২১৫টি পঞ্চায়েত ও ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ লক্ষ্য থেকে অনেকটাই দূরে। নবান্নের সোমবারের (২০ জানুয়ারি) রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া টাকা খরচে রাজ্যের ১৩টি জেলার পরে নাম রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি লক্ষ্যপূরণের কাছে পৌঁছলেও জেলা পরিষদ পারছে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের দাবি, “জেলা পরিষদের সব প্রকল্পই পাইপ লাইনে রয়েছে। গত অর্থ-বছরেও এই সময়ে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু বছর শেষে আমাদের স্থান ঠিক ছিল। এ বারও সেটাই হবে।”
এই আর্থিক বছরে জেলা পরিষদ পেয়েছে ৬২ কোটি ৯৬ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী জেলা পরিষদ খরচ করেছে ২৫ কোটি ৮২ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রাপ্যের ৪১.০১%। রাজ্যের নিরিখে জেলা পরিষদের গড় খরচের চেয়েও পূর্ব বর্ধমান পিছিয়ে রয়েছে। জেলা পরিষদের হাতে পড়ে রয়েছে ৩৭ কোটি ১৪ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলা পরিষদ কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি বলেও জানা গিয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, নির্দেশের পরে খরচ তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। কিন্তু পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দের পূর্ণ ব্যবহার এখনও দূরে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ‘ঢিলেমি’র জন্যই এই হাল বলে দাবি।
তবে জেলা পরিষদের ‘গাফিলতি’ কিছুটা হলেও ঢেকে দিয়েছে জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ২১৫টি পঞ্চায়েত। নবান্নের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতির কাছে মোট ৩৮ কোটি ৬৬ লক্ষ ৫১ হাজার ঢুকেছে। সোমবার পর্যন্ত ৩১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা খরচ করেছে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি। পড়ে রয়েছে ৭ কোটি ৩২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। গত এক সপ্তাহেই জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলি খরচ করেছে ৫৭ লক্ষ টাকা। ২১৫টি পঞ্চায়েত উন্নয়নের জন্য পেয়েছে ১৭৯ কোটি ৯৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১৩৬ কোটি ৮৯ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিতে পড়ে রয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে এসপ্তাহে উন্নয়নের খাতে পঞ্চায়েতগুলি খরচ করেছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা। খরচের নিরিখে যে সব ব্লক এগিয়ে রয়েছে সেগুলি হল খণ্ডঘোষ, গলসি ২, ভাতার, রায়না ১। আর পিছিয়ে থাকা ব্লকের মধ্যে রয়েছে কালনা ২, পূর্বস্থলী ২, কাটোয়া ১, পূর্বস্থলী ১, মেমারি ২-এর মতো কিছু এলাকা।
রিপোর্ট বলছে, সব মিলিয়ে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে জেলা পেয়েছে ২৮১ কোটি ৬১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে খরচ হয়েছে ১৯৪ কোটি ৫ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। প্রাপ্য টাকার ৬৮.৯১% খরচ করেছে জেলা। পড়ে রয়েছে ৮৭ কোটি ৫৬ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। শেষ সাত দিনে জেলায় খরচ হয়েছে ৩ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টাকা খরচে বাধা কোথায়, তা জানতে জানুয়ারির শেষ দিন বিকালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব কর্তা ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সেখানেই জানা যাবে জেলা পরিষদের পিছিয়ে থাকার কারণ।