—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে আবার জল ছাড়াল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। রবিবার রাতে ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে, মাইথন জলাধার থেকে ৩০ হাজার এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। রবিবার সকালে দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার কিউসেক এবং ২০ হাজার কিউসেক।
রবিবার রাতে পাঞ্চেত এবং মাইথন থেকে আসা ৪২ হাজার কিউসেক জল পৌঁছেছে দুর্গাপুর জলাধারে। দুর্গাপুর জলাধার থেকে ৪৯ হাজার ৫০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই জল দামোদর নদী অববাহিকা ধরে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলিতে পৌঁছবে। বন্যা পরিস্থিতির জেরে এখনও জলের তলায় হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানের বহু গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসির ছাড়া জল নিচু এলাকাগুলিকে নতুন করে প্লাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনিতে ঝাড়খণ্ডে নতুন করে আর বৃষ্টি হয়নি। আর সেই কারণেই ধাপে ধাপে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হচ্ছে বলে ডিভিসি সূত্রে খবর।
মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসির ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবারই তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ বিষয়ে দ্বিতীয় চিঠিটি লিখেছেন। জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রের আচরণের প্রতিবাদে দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি) থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তার পরেই রবিবার ডিভিসির বোর্ড এবং ডিভিআরআরসি থেকে ইস্তফা দেন রাজ্যের দুই শীর্ষ আধিকারিক। ডিভিসি বোর্ড থেকে সরে যান পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দফতরের সচিব শান্তনু বসু। ডিভিআরআরসি থেকে ইস্তফা দেন রাজ্যের প্রতিনিধি তথা সেচ দফতরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার উত্তম রায়। ডিভিসি ছাড়াও জল কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিটি গঠিত।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে জল বেড়ে যায়। ডিভিসি জল ছাড়ার পরেই পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। গত বুধবার সেই বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন মমতা নিজে। রাতে মেদিনীপুরে থেকেওছিলেন তিনি। গোটা পরিস্থিতির জন্য তিনি প্রথম থেকেই ডিভিসিকে দায়ী করে এসেছেন। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে বাঁধের জল ছেড়ে বাংলায় বন্যা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একে ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে অভিহিত করে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তিনি ডিভিসির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। তার পরেই মোদীকে বন্যা পরিস্থিতি জানিয়ে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী।