এ বারে পুজোর থিম ‘বৃহন্নলার পুজো’। —নিজস্ব চিত্র।
এ বার গ্রামের পুজোর থিম, ‘বৃহন্নলার পুজো’। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে। জঙ্গলঘেরা গোপালপুরে। পুজো শুরুর আগেই থিমের বিজ্ঞাপন ঘিরে এলাকায় তৈরি হয়েছে আগ্রহ।
পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা রাধামাধব মণ্ডল জানালেন, প্রতি বছরই তাঁদের গ্রামের পুজোকে ঘিরে চমক থাকে মূলত ভূমিহীন কৃষিজীবীদের এই গ্রামে। পরিযায়ী শ্রমিক, কৃষি শ্রমিকদের উদ্যোগেই হয় এই পুজো। আশপাশের জমিদারদের গ্রামে পুজো হত আগে থেকেই। নতুন গুড়ের ভিয়েন বসত জমিদার মহলের অন্তঃপুরে। সে সব দেখে দেখে, গ্রামের গরীব ছেলেদের দল ভিড় করত সেই সব পুজোতে। এর পর লেখক রাধামাধব গ্রামের কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর। তাঁর কথায়, আমাদের গ্রামের ক্ষেতমজুরেরা এক দিনের আয় দিয়ে এবং আরও কিছু মানুষের সহযোগিতায় পুজো শুরু করেছিলাম প্রথম। আজও আমি এবং আমাদের গ্রামের পরিধন কর্মকার, প্রদীপ ঘোষ, কালোসোনা মেটে, নিমাই মেটে, গুরুদাস মণ্ডল, কালীদাস মেটে, রতন কর্মকারদের নিয়ে ঘরে ঘরে সাহায্য চাওয়া হয়। আর রাখী ঘোষ, মিতালি কর্মকার, বন্দনা ঘোষ, তাপসী মেটেরা গ্রামের মহিলামহলকে নিয়ে পুজোয় অংশ নেন। সমবেত সাহায্যের মাধুকরীতেই আমাদের পুজো চলে।’’
রাধামাধব বলেন, ‘‘এ বছর আমরা আমাদের এই দুর্গাপুজোকে উৎসর্গ করেছি, জেলার প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে।’’ আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের ঐতিহাসিক যুগের নিদর্শন ক্ষেত্র পাণ্ডুরাজার ঢিবি, আর পাণ্ডুক গ্রামের অদূরে, অজয়পাড়ের গ্রাম গোপালপুর-উল্লাসপুর। সেখানকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের মাঠেই আয়োজন করা হয় দুর্গাপুজো ও উৎসবের। গত বছর দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল কৃষকপুজো দিয়ে। গ্রামের দুই প্রবীণ কৃষক মুক্তি মেটে এবং রামকানাই মণ্ডলকে পুজো করে শুরু হয়েছিল পুজো। রাধামাধবের কথায়, ‘‘এ বছরের ভাবনা একটু বদলেছি। এ বার আমরা মহাপঞ্চমীর দিন দুই বৃহন্নলাকে পুজো করে, শুরু করব আমাদের দেবী আরাধনা।’’ জানালেন রাঢ়বঙ্গের বহুরূপীর দল, লাঠিখেলার দল এবং যাত্রাগান, বাউলগান থাকছে গোপালপুরে এ বারের পুজোতে।
পুজো কমিটির সদস্যা, শিল্পী রাখী ঘোষ বলেন, ‘‘এ বার পুজোয় গোটা গ্রামকে আলপনায় সাজানো হবে। সেই সঙ্গে আমাদের পুজো প্যান্ডেল হবে, লোক আঙ্গিকে। রাজ্যের বহু বিশিষ্ট মানুষ আসবেন আমাদের পুজোয়। এ বার আসবেন সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক জগতের বহুমানুষ। তবে আমরা আমাদের পুজোয় কোনো সরকারি অনুদান এখনও পাই না। নিজেরাই কায়িক শ্রমদান করে আর অর্থসাহায্য চেয়ে পুজো করি।’’ পুজো কমিটির সদস্যা, গৃহবধূ বন্দনা ঘোষ, মিতালী কর্মকাররা জানান, তাঁদের গ্রাম বার বার অজয় নদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন বহু গ্রামবাসী। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আঠারো পাড়ার গ্রাম এখন সাত পাড়ায় দাঁড়িয়েছে। তবুও বন্ধ হয়নি নতুন ভাবনা নিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা।