Durga Puja 2022

তিনশো পেরিয়েছে পুজোর বয়স, আজও একই নিষ্ঠা ও ভক্তি ভরে দুর্গাপুজোয় মাতে আউসগ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি

ষষ্ঠীতে প্রতিমাকে বেদীর উপরে তুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কথিত আছে, সন্ধি পুজোয় প্রতিমা দুলে ওঠে, তার পর থেকেই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার চল শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৩৪
Share:

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র।

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার অন্তর্গত জঙ্গলমহল এলাকার গোস্বামীখণ্ড গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোর বয়স ৩০০ পেরিয়েছে। এই বাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন বংশের আদি পুরুষ গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্মিত দুর্গা মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পুরনো মন্দিরটির পাশে ১২৭১ বঙ্গাব্দে একটি নতুন দুর্গা মন্দির নির্মাণ করেন গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র সারদাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোপালপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মন্দিরেই বর্তমানে দুর্গাপুজো হয়।

Advertisement

এক সময় জমিদারি ছিল, দুর্গাপুজোও হত খুবই ধুমধাম করে। আলোর রোশনাই, ঝাড়বাতির আলোতে মন্দির প্রাঙ্গন ঝলমল করত। মন্দিরের ভেতরের চার কোণে চারটি সুদৃশ্য বিশাল আকারের ঝাড়বাতি ছিল। যা আজ কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে। আগের জৌলুস কমলেও ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও পূজো করে আসছেন গোপীনাথের পরিবারের সদস্যরা।

রথযাত্রার দিন সকালে হয় কাঠামো পুজো। ওই দিনই মায়ের গায়ে প্রথম গঙ্গামাটি দেন কুলপুরোহিত। বংশ পরম্পরায় তাঁরা মায়ের পুজো করে আসছেন। আগে মৃৎশিল্পীও বংশপরম্পরায় মূর্তি গড়তেন, কিন্ত বর্তমান প্রজন্ম এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় নতুন মৃৎশিল্পী এসেছেন। তিন চালার সোলার সাজের মূর্তি। এখানে দুর্গার রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। আগে একচালার প্রতিমা হলেও বর্তমানে বিসর্জনের সুবিধের জন্য সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। মায়ের শোলার সাজও বংশপরম্পরায় তৈরি করেন স্থানীয় মালাকাররা।

Advertisement

বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা দালান। নিজস্ব চিত্র।

রীতি মেনে কৃষ্ণা নবমীর দিন ঘট স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। সে দিন থেকে ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত বোধনের ঘটে চলে নিত্য পুজো। ষষ্ঠীর দিন সকালে মৃন্ময়ী মাকে বেদীর উপরে তুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় প্রতিমার পেছনের দেয়ালের লেগে থাকা তিনটি কড়ার সঙ্গে। কথিত আছে সন্ধি পুজোর সময় মায়ের প্রতিমা দুলে ওঠে, তার পর থেকেই মাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

অন্ন ভোগের ক্ষেত্রে বিশেষত্ব আছে। সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেক দিন মায়ের ভোগের প্রধান পদ হল কচুর শাক। এ ছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন রকমের তরকারি, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি তো থাকেই। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন দিনই বারোটি বিশালাকার থালায় নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। নৈবেদ্য, মিষ্টি, শরবত ও চিনির নৈবেদ্য, নাড়ু ও মুরকির নৈবেদ্য পানমশলা নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন চিড়ে, মুড়কি, দই বিভিন্ন রকমের নাড়ু, ফল ইত্যাদির ভোগ নিবেদন করা হয়।

আগে পাঠা বলির প্রথা থাকলেও এখন তা বন্ধ। ৩০০ বছর ধরে দশমীর দিন কুমারী পুজো হয়। কুমারী পুজোর পৌরহিত্য করেন বাড়িরই বয়োজ্যেষ্ঠ কোনও বধূ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement