শপিংমলে ভিড়, তবে সাধারণ দোকাই ফাঁকাই। মুখে মাস্ক থাকলেও দূরত্ববিধির বালাই নেই সর্বত্র। পুজোর আগে শেষ রবিবার কেনাবেচার এমনই ছবি বর্ধমান, কালনা, কাটোয়ার বাজারে।
অন্য বার পুজোর দিন দশেক আগে থেকে কালনা শহরের ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। জামাকাপড়, মিষ্টির দোকান, মুদিখানা থেকে বিউটি পার্লারে চলে থিকথিকে ভিড়। এ বার অবশ্য দু’একটা শপিংমল ছাড়া পথেঘাটে লোকজন তেমন নেই। এ দিন পুরনো বাসস্ট্যান্ড, অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম চত্বর, সোনাপট্টি, বৈদ্যপুর মোড়, চকবাজারের কাপড় পট্টি, মুদিখানা পট্টি কোথাও তেমন লোকজন দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিবারই গ্রাম থেকে কেনাকাটার জন্য বহু মানুষ শহরে আসেন। এ বার তাঁদের সংখ্যা অনেকটাই কম। যাঁরা আসছেন তাঁরাও বাজেট কমিয়েছেন অনেকটাই।
স্টেডিয়াম চত্বরে বেশ কয়েকটি জামা কাপড়ের দোকান রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সুরঞ্জন রায় দোকানের বাইরেও ক্রেতা টানতে জামাপ্যান্ট সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু খরিদ্দার নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার এতটা খারাপ হবে ভাবিনি।’’ চকবাজার এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী রণজিৎ মোদকেরও দাবি, ‘‘প্রতিবার বাজার করে ফেরার পথে রকমারি মিষ্টি কেনেন ক্রেতারা। এ বার নতুন মিষ্টি বানালেও খরিদ্দার নেই।’’ ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, শ্রীরামপুরেও একই ছবি।
সমুদ্রগড়ের তাঁত ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোয় ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির বিক্রি এ বার তলানিতে। যাঁরা আসছেন, কম দামী শাড়ি খুঁজছেন।’’ তাঁদের দাবি, বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন লকডাউনে। চাষি থেকে তাঁতি, সবারই টাকার জোগান কম। আবার সংক্রমণের আশঙ্কাতেও কেনাকাটা বাদ রেখেছেন অনেকে।
রবিবার বেলা বাড়তেই বর্ধমান শহরের বিসি রোডের শপিংমলে ভিড় বাড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শপিংমলের কাউন্টারে লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও দূরত্ববিধির বিধিনিষেধ ছিল শিকেয়। টাউন হল পাড়ার একটি শপিংমলেও গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েই চলে কেনাকাটা। পারবীরহাটার একটি শপিংমলে আবার কেনাকাটার সময়ে দূরত্ব থাকলেও বিল করার লাইনে গিজগিজে ভিড় দেখা যায়। বাদামতলা বা জেলখানা মোড়ের শপিংমল কর্তৃপক্ষের দাবি, পোস্টার দিয়ে বারবার মাস্ক, দূরত্ব মানার কথা স্মরণ করানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই শোনেননি। আবার বিসি রোড, তেঁতুলতলা বাজারের সাধারণ দোকানেও ভিড় ছিল। দক্ষিণ দামোদরের পলেমপুর থেকে বাজার করতে আসা বর্ণালী ধাড়া, ভাতারের হাটকানপুর থেকে আসা গদাধর রায়েরা জানান, সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত অফিস ছিল। রবিবার ছুটি পেয়ে সপরিবার বাজার করতে এসেছেন তাঁরা। যতখানি সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা বাজার করেছেন, দাবি তাঁদের।
কাটোয়ায় আবার বাজারের সঙ্গে গঙ্গাস্নানেরও ভিড় দেখা যায় এ দিন। ভাগীরথী একাধিক ঘাট, বাজারে মাস্ক ছাড়াই ঘুরতে দেখা যায় অনেককে। শহরবাসীর একাংশের দাবি, যত পুজো কাছে আসছে, তত বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন কিছু মানুষ। আবার দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়ে কাছারি রোড, সার্কস ময়দান, নিচুবাজার ও বড় বাজারের কাপড়ের দোকানগুলিতে। বিক্রেতাদের দাবি, অন্য বারের মতো না হলেও শেষ রবিবার কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে।
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯