প্রতীকী ছবি।
অন্য বছর এমন সময়ে পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল বাঁধার কাজ প্রায় সারা হয়ে যায়। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত থাকেন মৃৎশিল্পীরা। এ বার প্যান্ডেল বাঁধার সেই ছবি নেই বেশিরভাগ জায়গায়। কুমোরপাড়াতেও অন্য বারের ব্যস্ততা নেই।
বর্ধমানের রাজগঞ্জের প্যান্ডেল ব্যবসায়ী সরোজকুমার মহন্ত জানান, অন্য বার আট-দশটি পুজোর প্যান্ডেল তৈরি করতেন। এ বার বরাত পেয়েছেন তিনটির। সেগুলিরও বাজেট গত বারের অর্ধেক। মেমারির প্যান্ডেল ব্যবসায়ী স্বাধীন বন্দ্যোপাধ্যায়, গলসির স্বপন রায়, বর্ধমান ১ ব্লকের শেখ অমর আলিদের দাবি, গ্রামীণ এলাকায় পুজো কম হচ্ছে। যা হচ্ছে, তা-ও ছোট আকারে। ফলে, তাঁদের আয় কমছে। সরকার যেমন পুজো কমিটির পাশে দাঁড়াচ্ছে, একই ভাবে তাঁদেরও পাশে দাঁড়াক— আর্জি তাঁদের।
বর্ধমানের ‘ডেকরেটর সমন্বয় সমিতি’র সম্পাদক তাপস অধিকারী জানান, তাঁদের ২৪৬ জন সদস্য আছেন। সকলেই এ বার কম প্যান্ডেল তৈরির বরাত পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার জেরে আমাদের ঘোর সঙ্কট নেমে এসেছে।’’
একই সঙ্কটের কথা শোনাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরাও। বর্ধমানের কাঞ্চননগর, নীলপুর, ইছলাবাদের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা জানান, প্রতি বার কাজ শেষ করা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হত তাঁদের। এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। বরাত মিলেছে কম। যাঁরা বরাত দিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই আকারে ছোট প্রতিমা চেয়েছেন। কাঞ্চননগরের মৃৎশিল্পী বলরাম পাল বলেন, ‘‘অন্য বছর ১৮-২০টি প্রতিমা তৈরির বরাত মিলত। এ বার তা অর্ধেকে ঠেকেছে। কেউই বড় প্রতিমার কথা বলেননি। সকলেই জানিয়েছেন, বাজেট কমিয়ে ছোট করে পুজো করছেন।’’
ইছলাবাদের নারায়ণ পালের দাবি, গত বছর ৩৮টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। এ বার বরাত ১৪টির। গত বার যাঁরা এক লক্ষ লাখ টাকার প্রতিমা কিনেছিলেন, এ বার ৫০ হাজার টাকায় চেয়েছেন। নীলপুরের নিখিল পাল জানান, গত বার ৪০টি প্রতিমার বদলে এ বার তাঁর ঝুলিতে অর্ধেক বরাত।
বর্ধমান দুর্গাপুজো সমন্বয় সমিতির কর্তা সুকান্ত দাস বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে বর্ধমানে প্রায় পাঁচশো পুজো হয়। এখনও পর্যন্ত যা খবর, সব পুজোই হবে। আকারে হয়তো ছোট হবে। আশা করি, পুজোর সঙ্গে জড়িত সকলেরই আয়ের পথ খুলে যাবে।’’