বর্ধমান থানায় বিক্ষোভ। শুক্রবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়েও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠল বর্ধমান শহরে। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিটে কয়েকজন জখম হলেন শুক্রবার দুপুরে শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে বিদ্যাপীঠ স্কুলের মাঠে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক খোকন দাসের নেতৃত্বে দলের পতাকা ছাড়াই বর্ধমান থানা ঘেরাও করেন কিছু কর্মী। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ওই স্কুলে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি শুরু হয়। লম্বা লাইন পড়েছিল। মানুষজনকে ‘সাহায্য’ করার জন্য সকাল থেকে বিদায়ী কাউন্সিলরের অনুগামীরা স্কুলের মাঠে হাজির ছিলেন। ছিলেন বিদায়ী কাউন্সিলরের ‘বিরোধী’ হিসেবে দলের অন্দরে পরিচিত, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সচিব শিবশঙ্কর ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরাও। তাঁর অভিযোগ, “এলাকায় অনেকে ঠিকমতো ফর্ম পূরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পগুলির সুযোগ নিতে পারবেন না। সে জন্য শিক্ষিত ছেলেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য করছিলেন। তাতেই গাত্রদাহ হয় প্রাক্তন কাউন্সিলরের। তাঁর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে গেলে, আমাকেও মারধর করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় আমি একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম।’’
বিদায়ী কাউন্সিলরের পাল্টা দাবি, ‘‘অশান্তি করা ও প্রকল্পের কাজ ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে ৬০-৭০ জনকে নিয়ে স্কুলে মাঠে আসেন শিবশঙ্কর। লাইনে দাঁড়ানো মানুষজনকে উত্ত্যক্ত করছিলেন ওঁরা। তা নিয়ে বচসা হয়। তখন ওঁরা এলাকার প্রবীণ মানুষকে মারধর করলে পাড়ার লোকজন পাল্টা তাড়া করেন। তাতে ওরা পালায়। পালাতে গিয়ে কেউ কেউ আহত হয়েছে।’’ রেলের প্রাক্তন কর্তা, ওই এলাকার বাসিন্দা তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমি রাজনীতি করি না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পছন্দ করি। তাই স্কুলের মাঠে এসেছিলাম। কেন এসেছি, তা জানতে চেয়ে আমাকে চড় মারা হয়। কেন মারা হল বুঝতে পারলাম না!’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস, জেলা আইএইনটিটিইউসি-র সভাপতি ইফতিকার আহমেদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা গিয়ে একটি বাড়ি থেকে শিবশঙ্করবাবুকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঘটনার প্রতিবাদে বর্ধমান-কালনা রোড অবরোধ করা হয়। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। বর্ধমান থানার আইসি পিন্টু সাহার নেতৃত্বে পুলিশের বাহিনী গিয়ে স্কুলের মাঠ থেকেও লোকজনকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ জানায়, টহল বাড়ানো হয়েছে এলাকায়।
তৃণমূল নেতা খোকনবাবুর দাবি, ‘‘আগে এ সব ছিল না। এখন হচ্ছে। সব বিজেপির চক্রান্ত। আমরা ওই বিদায়ী কাউন্সিলরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’’ তাঁর আরও দাবি, ওই এলাকায় বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে তাই অনেকে তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। বর্ধমান শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ দাসের বক্তব্য, ‘‘শুধু এটুকু বলতে পারি, এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’’
বিজেপির জেলা (বর্ধমান সদর) সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীল গুপ্ত দাবি করেন, ‘‘পুরোপুরি তৃণমূলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াইয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। অহেতুক বিজেপির নাম জড়ানো হয়েছে।’’