দুর্ঘটনগ্রস্ত ট্রাক ও খাদান।ফাইল চিত্র।
ঘটনার দু’দিন কেটে গেলেও আতঙ্ক কাটেনি মুইদিপুরের। জামালপুরের দামোদর পাড়ের ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে ঘর ভেঙে বালির ট্রাক ঢুকে মা-সন্তানদের মৃত্যু তাঁরা ভুলতে পারছেন না। মুণ্ডেশ্বরীর বালিঘাট বন্ধ না হলে আরও দুর্ঘটনা হবে, আশঙ্কা তাঁদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চালক মত্ত অবস্থায় অতিরিক্ত বালিবোঝাই ট্রাক চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই বাড়িতে ধাক্কা মারেন। তবে রবিবারও ট্রাক চালক বা খাদান মালিকের খোঁজ পায়নি পুলিশ।
এ দিন থেকে মত্ত ট্রাক চালকদের বিরুদ্ধে অভিযানও শুরু করেছে পুলিশ। খণ্ডঘোষ থানা কয়েকজন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘প্রতিটি থানাকে ট্রাক চালকেরা মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কি না, তা দেখার জন্য অভিযান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ মুইদিপুরের ঘটনার পরে খাদান থেকে মত্ত অবস্থায় গাড়ি নিয়ে বেরনোর অভিযোগ করেছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তার পরেই অভিযানের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
গ্রামবাসী সুজাতা বাউরির দাবি, ‘‘রোজ দেখা হত ওদের সঙ্গে। সেই বাড়িটা এখন ধ্বংসস্তূপ। খাদান চললেই বালির ট্রাক চলবে। বিপদকে সঙ্গে নিয়ে বাস করতে হবে আমাদের।’’ রেখা বাউরি, রমলা বাউরিরাও বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। সব সময় মনে হচ্ছে, বালির ট্রাক চললে আমরা কী করব?’’ শকুন্তলা বাউরি, সুলেখা বাউরিদের কথায়, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। অন্য কোথাও যেতে পারব না। বিপদ আর আতঙ্ক নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।’’
স্ত্রী সন্ধ্যা ও দুই সন্তান রাহুল ও রিঙ্কুকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান প্রশান্ত বাউরি। ঘটনার দিনই জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে তাঁর হাতে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ মিলেছে। কিন্তু স্ত্রী-ছেলেমেয়ে তো ফিরে পাব না।’’
বিজেপির অভিযোগ, মুণ্ডেশ্বরীর উপরে অন্তত দু’টি অবৈধ বালি খাদান রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার বলার পরেও ওই খাদান বন্ধে প্রশাসন উদ্যোগ নেয়নি। কোড়া গ্রামে বালির গাড়ি নিয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিলে মুইদিপুরের ঘটনা ঘটত না, দাবি তাঁদের। এলাকার বিজেপি নেতা অভিজিৎ ঘোষাল বলেন, ‘‘শাসক দলের মদতে অবৈধ বালি খাদান চলছে। এলাকার মানুষের প্রতিবাদে কাজ হয়নি।’’ যদিও জামালপুরের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানের দাবি, ‘‘খাদানের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা অবৈধ খাদান নিয়ে সবসময় সরব। কোথাও অবৈধ খাদান থাকলে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ বন্ধ করে দেবে।’’