প্রতীকী ছবি।
ক্রেতা নির্দিষ্ট। তাঁদের কাছে থাকে ভ্রাম্যমাণ ‘এজেন্ট’দের ফোন নম্বর। ‘প্রয়োজনে’ ওই নম্বরে ফোন করলে, বলে দেওয়া হয়, কোথায়, কখন যেতে হবে। আর তার পরেই হাতবদল হয় ব্রাউন সুগারের পুরিয়ার। সম্প্রতি এই কারবারে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে জেরা করে ও বিশেষ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে দাবি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের একাংশের।
সম্প্রতি হিরাপুর, নিয়ামতপুর, আসানসোল রেলপাড়, জামুড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে এই কারবারে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে দাবি, মূলত মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে ব্রাউন সুগার ঢোকে পশ্চিম বর্ধমানে। ‘রুটটি’: জামুড়িয়ার বাগডিহা, বারাবনির রুনাকুড়াঘাট, পাণ্ডবেশ্বর সেতু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মোটরবাইকে করে তা নিয়ে আসা হয়। ‘মাল’ আনা হয় মূলত, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাণ্ডবেশ্বর সেতু, হরিপুরবাজার, চুরুলিয়া মোড়, আসানসোল রেলপাড়, রানিগঞ্জের রনাই, চর্বি মহল্লায়। সে সব জায়গা থেকেই জেলার নানা প্রান্তের ‘এজেন্ট’রা নিয়ে যান মাদক,
দাবি এমনই।
‘এজেন্ট’দের থেকে কী ভাবে মাদক মেলে, তা জানালেন জামুড়িয়ার এক ‘ক্রেতা’। ফোন নম্বর লোকমুখে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়, দুই সূত্রেই পাওয়া যায়। সেখানে ফোন করলে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গা বলে দেওয়া হয়। সেখানে গেলেই এক গ্রাম মাদক এক হাজার টাকায়, দু’শো মিলিগ্রাম মাদক দু’শো টাকায় হাতবদল হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই নেশার কবলে পড়ছেন কলেজ পড়ুয়া-সহ তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই। এমন দাবি করে সম্প্রতি বার্নপুর গুরুদ্বার কমিটি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এই কারবার বন্ধের দাবিও জানিয়েছে। গুরুদ্বার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলিন্দর সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মূলত তরুণ প্রজন্ম এই নেশার কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা না গেলে, সমস্যা ভয়াবহ আকার নেবে। আমরা জানতে পেরেছি, কুলটির লছিপুর থেকেও এই মাদক বার্নপুর ও আসানসোলের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে।’’
নবীন প্রজন্মের ‘ক্ষতি’র কথা জানা গিয়েছে জেলার কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেও। রানিগঞ্জের রনাই, জামুড়িয়ার কেন্দা ও হরিপুরের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন জন অভিভাবক বলেন, ‘‘ছেলেদের নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠাতে হয়েছিল। আপাতত, তাদের নেশামুক্তিও ঘটেছে। কিন্তু এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ না করা গেলে, অচিরেই বিপদ আরও বাড়বে।’’
শারীরিক ক্ষতির কথা শুনিয়েছেন সাবেক আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার শ্যামল সান্যালও। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রাউন সুগার স্নায়ু ও মস্তিষ্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর জেরে, শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক ক্ষমতা হ্রাস পায়। যিনি এই নেশায় আসক্ত, তাঁর ব্যবহারেও পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলি পরিবারের লোকজনকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি, প্রশাসনকেও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুরের অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘‘লাগাতার অভিযান চলছে। এই কারবারকে নির্মূল করাটাই আমাদের লক্ষ্য। জোর দেওয়া হচ্ছে সচেতনতা প্রচারেও। বিভিন্ন সীমানাতেও বিশেষ ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তার সুফলও মিলছে।’’