দামোদরে ছটপুজো। বর্ধমানের সদরঘাটে। নিজস্ব চিত্র।
দুপুরের পর থেকেই ম্যাটাডর, পিক আপ ভ্যান, ট্রাকে করে পূণ্যার্থীরা রওনা দিয়েছিলেন দামোদরের দিকে। বিকেল গড়াতেই ভিড় উপচে পড়ল বর্ধমানের সদরঘাটে। রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত যান নিয়্ন্ত্রণ করে পুলিশ। তবে সন্ধ্যায় শব্দবাজি বা সাউন্ড বক্সের দাপট তেমন দেখা যায়নি জেলার কোথাও। রাত বাড়তে অবশ্য বর্ধমানের বেশ কিছু জায়গায় বাজির দাপট দেখা যায় বলে অভিযোগ।
বর্ধমান পুরসভার অন্তর্গত ১৬টি ঘাট রয়েছে যেখানে ছটপুজো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় সদরঘাটে দামোদর চরে। বিকেল ৩টে থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। শহরের ভিতরে জিটি রোডের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। বর্ধমান-আরামবাগ রোডের যানজট এড়াতে পুলিশ নদীমুখী গাড়িগুলিকে পূর্ত ভবনের পাশের বালিখাদ যাওয়ার রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। ফলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ধমান-আরামবাগ রোডের তেলিপুকুর থেকে দামোদরের উপরে কৃষক সেতু পর্যন্ত যানজট ছিল না বললেই চলে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত চারশো পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হয় ঘাটগুলিতে। সোমবার ভোর ৪টে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফের যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দামোদরের ঘাটে আলো, পুলিশের নজরদারির ব্যবস্থা করা হয় এ দিন। অনেককেই গাডিতে ডিজে, সাউন্ড বক্স বেঁধে নিতে দেখা যায়। তবে আওয়াজ লাগাম ছাড়ায়নি, দাবি পুলিশের। রুমকি শর্মা, আশা শর্মা, আত্মা সাউ, ব্রিজেশ শর্মারা বলেন, ‘‘রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ঘাটের ব্যবস্থা ভাল ছিল। করোনা পর্ব কাটিয়ে নদীতে পুজো করতে আসতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।’’ রবিবার থেকে সদরঘাটে ক্যাম্প করেছে ছটপুজা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরিষেবাও দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের এক কর্তা শরৎ কোলে বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছি। নিরাপত্তা দেখা হচ্ছে।’’
ভাগীরথীর ঘাটগুলিতেও আলো, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে পুজো করতে দেখা যায় কালনায়। দুর্ঘটনা এড়াতে নদীতে টহর দিচ্ছিলেন দুর্যোগ মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। প্রতিটি ঘাটের আশপাশে মোতায়েন করা হয় প্রচুর সিভিক ভলান্টিয়ারও। মহিষমর্দ্দিনীতলার ঘাটে শিবির করেছিল কালনা পুরসভা। অন্য বছর শব্দবাজির তাণ্ডব থাকলেও, এ বার তা চোখে পড়েনি। তবে নদীর ও পারে, নদিয়ার নানা ঘাট থেকে বাজির আওয়াজ কানে এসেছে, দাবি করেছেন অনেকে। পুজো সেরে বাড়ি ফেরার পথে রানি শর্মা বলেন, ‘‘যে পরিমাণ মানুষ ছটপুজোয় আসেন সে তুলনায় ঘাট কম রয়েছে। কয়েকটি ঘাট আকারে ছোট। পুরসভার তরফে আরও কয়েকটি ঘাট করা হলে ভাল হয়।’’ পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর এলাকায় খাদিভবন থেকে বৈরাগীপাড়া পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রা হয়। ছিলেন প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। বৈরাগীপাড়া এলাকায় মুড়িগঙ্গার ঘাটেও ছটপুজো হয়।