সন্তানশোক: শোকার্ত মধুমিতাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।
একই দিনে জোড়া অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একটি শিশু বদলের, অন্যটি গাফিলতিতে শিশু-মৃত্যুর।
বর্ধমানের মাধবডিহির লোহাই গ্রামের গৃহবধূ মধুমিতা খাঁ গত ৮ মার্চ ওই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন। ওই দিনই ছেলে হয় তাঁর। কিন্তু শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থাকায় শিশুটিকে সে দিন শিশুবিভাগে এবং ১০ মার্চ থেকে এনআইসিইউয়ে (নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট) ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে বাচ্চাটি মারা গিয়েছে বলে পরিজনদের জানানো হয়। কিন্তু মৃতদেহ দেখে বেঁকে বসেন তাঁরা। দাবি করেন, মৃত শিশুর সঙ্গে তাঁদের বাচ্চার চেহারা মিলছে না।
মধুমিতাদেবীর স্বামী কালীরাম খাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলের ঠোঁটের উপরে, নাকের নীচে বাঁ দিকে একটা জড়ুল ছিল। মৃত বাচ্চাটার তা নেই। তা ছাড়া, আমার বাচ্চার গায়ের রং বেশ চাপা ছিল। যার দেহ আমাদের দেওয়া হচ্ছিল, সে বেশ ফর্সা।’’
জন্মের সময় শিশুটিকে দেখেছিলেন তার দিদিমা আশালতা মালিক, মামা রাজেশ মালিক ও জেঠামশাই চাঁদু খাঁ। চাঁদুবাবু বলেন, ‘‘দেখে মনে হয়, বাচ্চাটা আমাদের নয়। নিশ্চয় বাচ্চা বদলে গিয়েছে। ভাইপোকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছি হাসপাতালের কাছে।’’ পরিজনদের দাবি, যে নার্স তাঁদের মৃতদেহ দিতে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে থাকা নথি অনুযায়ী মৃতদেহটি এমন কোনও শিশুর, যার জন্ম বর্ধমান মেডিক্যালে নয়। অসুস্থতার জন্য তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সন্তানের শোকে ভেঙে পড়া মধুমিতাদেবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার বাচ্চাকে এনে দাও!’’
বর্ধমান মেডিক্যালে বাচ্চা বদলের অভিযোগ নতুন নয়। মাসকয়েক আগে শিশু বিভাগে তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ এবং নথি দেখে পরে সে সমস্যা সামলান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ বার প্রাথমিক তদন্তের পরে শিশু-বদলের অভিযোগ মানতে নারাজ তারা। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার দাবি, মধুমিতাদেবী এবং তাঁর ছেলের চিহ্নিতকরণ-নম্বর দেখেই পরিবারটিকে মৃতদেহ দেওয়া হয়। পরিবার দেহ নিতে না চাওয়ায় তা হাসপাতালেই রয়েছে। এর পরে ময়না-তদন্ত হবে।