সর্বনিম্ন দর দেখে অবাক জেলা সভাধিপতি
High Price of Food

খাবারের দাম দেখেই বাতিল দরপত্র 

জেলা পরিষদ সদস্যদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘ওই সংস্থা খোলা বাজারের চেয়ে বেশি দর দেওয়ার পরেও, আধিকারিকেরা তাতে মান্যতা দিলেন কী করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৩০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম ৩৪০ টাকা! মটন বিরিয়ানি ৪৫০ টাকা! চপ-মুড়ি ২৫ টাকা! জেলা পরিষদে খাবার সরবরাহের জন্য ডাকা দরপত্রে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম দেখে কার্যত চোখ কপালে উঠেছিল জেলা পরিষদের সভাপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের। জেলা পরিষদের সদস্য ও আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে কলকাতা ও বর্ধমানের বিভিন্ন রেস্তরাঁয় বিরিয়ানি-সহ অন্য খাবারের দাম জেনে নেন তিনি। তার পরেই, বৃহস্পতিবার দরপত্রের ফাইল ফেরত পাঠিয়ে তা বাতিল করে দেন।

Advertisement

সম্প্রতি সারা বছর জেলা পরিষদে খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, তাতে বিভিন্ন খাবারের সর্বনিম্ন যে দর দেওয়া হয়েছিল, তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। আধিকারিকেরা ওই দরে সিলমোহল দেওয়ার পরে, গত ৯ সেপ্টেম্বর তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল সভাধিপতির কাছে। ঘটনাচক্রে, যে সংস্থা সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল, তার সঙ্গে যুক্ত আবার জেলা পরিষদেরই এক কর্মী। এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সভাধিপতি।

কলকাতায় নামী রেস্তরাঁয় এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম ২৫০-৩০০ টাকা। মটন বিরিয়ানির জন্য খরচ করতে হয় ৩৫০-৩৭৫ টাকা। বর্ধমান শহরে নামকরা রেস্তরাঁয় চিকেন বিরিয়ানি পাওয়া যায় ২০০ টাকায়। মটন বিরিয়ানির জন্য আর কিছু টাকা দিতে হয়। সেখানে কেন জেলা পরিষদ এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির জন্য ৩৪০ টাকা আর মটন বিরিয়ানির জন্য ৪৫০ টাকা দেবে, সে প্রশ্ন তোলেন সভাধিপতি।

Advertisement

সভাধিপতি বলেন, ‘‘আমার কাছে ওই দরপত্র অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে সর্বনিম্ন যে সব দর দেওয়া হয়েছিল, তা সাধারণত খোলা বাজারের থেকে বেশি। জলের বোতলের দাম (৫০০ মিলিলিটার ১০ টাকা) খোলা বাজারের সমান। তবে এক সঙ্গে অনেক প্যাকেট জল কিনলে দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। সে কারণে দরপত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’’

জেলা পরিষদ সদস্যদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘ওই সংস্থা খোলা বাজারের চেয়ে বেশি দর দেওয়ার পরেও, আধিকারিকেরা তাতে মান্যতা দিলেন কী করে। তা ছাড়া যে সংস্থার সঙ্গে জেলা পরিষদের অস্থায়ী কর্মচারী যুক্ত, তারা কী ভাবে দরপত্র জমা দেয়?’’ যদিও জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের যুক্তি, ‘‘সর্বনিম্ন দর দেওয়ার জন্যই দরপত্রকে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল।’’

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ওই সংস্থা ছাড়াও তিন জন দরপত্র জমা করেছিলেন। তাদের দেওয়া দর ছিল আরও বেশি। সর্বনিম্ন দর দেওয়া সংস্থাটি ভাল মানের জলখাবারের জন্যে ২০০ টাকা, চপ-মুড়ির জন্য ২৫ টাকা, ভেজ মোমো (৬টি) ১৭০ টাকা, চিকেন মোমো (৬টি) ২০০ টাকা দর দিয়েছিল। জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি গার্গী নাহা বলেন, ‘‘আমরাও বাইরে খাওয়াদাওয়া করি। রেস্তরাঁয় বসেও এত দাম দিতে হয় না। সভাধিপতি ভাল পদক্ষেপ করেছেন।’’

বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কল্লোল খান। তাঁর কথায়, "ওই সংস্থাই এত দিন জেলা পরিষদে খাবার সরবরাহ করেছে। এ বার নিশ্চয়ই বর্তমান কর্তাদের সঙ্গে দরে গোলমাল হয়েছে। সে কারণেই দরপত্র আটকে গিয়েছে।’’ তৃণমূল অবশ্য এই বক্তব্যকে আমল দেয়নি।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘মেমারির রসুলপুরে কঠিন-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে একটি কর্মশালায় সর্বনিম্ন দর দেওয়া সংস্থার বিরিয়ানি সরবরাহ করা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement