কাটোয়ায় বিজেপির মিছিলে দিলীপ ঘোষ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
সব ঠিক থাকলে চলতি বছরেই পুরভোট হওয়ার কথা কাটোয়ায়। তার আগে রবিবার শহরে এক জনসভায় এসে গত পুরভোটের সময়ে বিরোধীদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগকেই ফের উস্কে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাশাপাশি, কাটোয়া পুরসভার পুরপ্রধান তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের আসার প্রসঙ্গটি নিয়েও ‘কটাক্ষ’ করেছেন দিলীপবাবু। তৃণমূল অবশ্য এ সব মন্তব্যকে আমল দিতে চায়নি।
এ দিন বিজেপি কাটোয়ায় মিছিল করে। তার পরে তৃণমূলের কার্যালয় থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে আয়োজন করে জনসভার। সেখান থেকেই দিলীপবাবুর তোপ, ‘‘কাটোয়ায় গত বারের ভোটের কথা মনে আছে? আপনারা ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। আমি টিভিতে দেখেছিলাম, দমাদ্দম বোমা পড়ছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বন্দুক হাতে দৌড়চ্ছে। আর এখানের যিনি মাননীয় চেয়ারম্যান, তিনি তো হাওয়া খারাপ দেখে লাফ দিয়ে ওপাশে চলে গেলেন।’’ যদিও তৃণমূলের শহর সভাপতি অমর রাম বলেন, ‘‘সন্ত্রাস হলে তৃণমূল কী ভাবে দশটা আসনে হারল? বরং ওই দিন তো আমাদের কর্মীকেই খুন হতে হয়েছিল।’’
দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের পরেই এলাকার বিজেপি নেতা, কর্মীদের একাংশ জানান, আদতে দলের নেতা গত পুরভোটের ‘স্মৃতি’ উস্কে দিলেন। পাশাপাশি, সুকৌশলে শুরু করলেন আগামী পুরভোটের প্রচারও। ঘটনাচক্রে, ২০১৫-র পুরভোটে শহরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ করেছিল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। অশান্তির খবরও প্রকাশ্যে এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিল তৃণমূল। ওই ভোটে পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে দশটি করে ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। এর এক মাসের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেন বেশ কয়েক বারের কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু এবং কংগ্রেসের টিকিটে জেতা কাউন্সিলরেরা। তার পরে অবশ্য ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি শহরের ১৪টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল। এমনকি, রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়ি ১৭ নম্বর এবং তাঁর জেতা ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও এগিয়েছিল বিজেপি। বিজেপি-র নেতা, কর্মীদের একাংশের মত, ২০১৫-র পুরভোটে জনসাধারণের ‘ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ’ লোকসভায় কাজে লেগেছিল তাঁদের। এ দিন তাই আগামী পুরভোটের দিকে তাকিয়েই দিলীপবাবুর এই মন্তব্য বলে জল্পনা বিজেপির স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে।
তবে দিলীপবাবুর মন্তব্যকে মোটেও আমল দিতে চাননি রবীন্দ্রনাথবাবু। নিজের দলবদল প্রসঙ্গে তাঁর মত, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের শরিক হতেই তৃণমূলে এসেছিলাম।’’ সেই সঙ্গে তিনি লোকসভা ভোট ও পুরভোটের তুলনাও টানেন। তাঁর মতে, কাটোয়ায় ১৯৯৮-এর লোকসভা ভোটে এগিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তার দু’বছরের মাথায় শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে জিতেছিল কংগ্রেস।
রবীন্দ্রনাথবাবুর দলবদলের স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে তাঁর পুরনো দল কংগ্রেসও। কংগ্রেসের কাটোয়া শহরের সম্পাদক শুভাশিস সামন্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের বিধায়কের দলবদল মানুষ ভাল ভাবে নেননি। তাই, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে অল্প ব্যবধানে তাঁর জয় এবং ২০১৯-এ তৃণমূলকে কাটোয়ার প্রত্যাখ্যান।’’