দিলীপ অগস্তি।
‘জনমোহিনী রাজনীতি’ থেকে দূরে। ফেলে আসা পেশার সৌজন্যে ‘আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা’ ত্যাগ করতে পারেননি— এই জোড়া কারণে দলের অন্দরে গোড়া থেকেই ধীরে-ধীরে ‘অপ্রিয়’ হয়ে উঠেছিলেন সদ্য পদত্যাগপত্র দেওয়া দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি। সূত্রের দাবি, এমনই চর্চা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। যদিও প্রতিক্রিয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করেও প্রতিক্রিয়া মেলেনি দিলীপের। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত, তাঁর মোবাইল বন্ধই মিলেছে। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “উনি শারীরিক কারণেই পদত্যাগ করেছেন। উনি দক্ষ প্রশাসক। সৎ মানুষ।”
২০১৭-র ৬ সেপ্টেম্বর মেয়র হওয়ার সময় থেকেই দিলীপের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সূত্রপাত, এমনটাই দলের অন্দরে বলে থাকেন দুর্গাপুরের অনেক তৃণমূল নেতা। তাঁদেরই এক জন জানান, মেয়র দিলীপের কাজকর্মের ধরন নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল দলের অনেকের। ওই নেতা উদাহরণ দিয়ে জানান, একটি ম্যাস্টিক রাস্তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এলাকায় পরিদর্শন করে দিলীপ তা বাতিল করে দেন। ‘যুক্তি’ দেন, এখানে বেশি গাড়ি চলে না। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের জেরে দূরে সরে যান দলেরই এক কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ। এ দিকে, ২০২০-তে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও দিলীপের ‘দ্বন্দ্ব’ এখনও চর্চা হয় দুর্গাপুরে। সে যাত্রা ক্ষোভ সামাল দিতে আসরে নামতে হয় তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতিকে। পাশাপাশি, ওই বছরই একটি বোর্ড বৈঠক ছেড়ে দিলীপ বেরিয়ে যাওয়ায়, তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ প্রকাশ্যেই সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হন।
শুধু দলের অন্দরে নয়, পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে দিলীপ এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা দুর্গাপুরের শিল্প-মহলকেও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। মেয়র দিলীপ ট্রেড লাইসেন্স ফি, বর্জ্য সাফাইয়ের ফি এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, ট্রেড লাইসেন্স পেতে গেলে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের যে কাগজপত্র থাকা জরুরি, তা অনেকে দিতে পারছিলেন না। এই বিষয়গুলি নিয়ে দুর্গাপুরের শিল্প-মহলের একটা বড় অংশ মেয়রের প্রতি বিশেষ ‘সন্তুষ্ট’ ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও দরবার করেন। মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুরের এক প্রশাসনিক বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, “এটা করব না, এটা হবে না, এমন ভাবলে চলবে না। ছোটখাটো অনেক কাজ রয়েছে। যেমন, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এগুলো মিটিয়ে ফেলুন।”
দিলীপকে কেন্দ্র করে সব থেকে বড় ‘বিতর্ক’টি হয়েছিল ২০২০-র ৫ নভেম্বর। দুর্গাপুর পুরসভার পারফর্মেন্স রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এর কারণ জানতে চান। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মেয়র কাজ করেন না।” এর পরেই, নতুন মেয়র করার কথা জানান মমতা। তবে সে যাত্রা তা হয়নি। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর মঙ্গলবার বলেন, “ওই দিনই মেয়রের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় অনেক সময়েই দল বিড়ম্বনায় পড়েছে।”
যদিও শারীরিক সমস্যার কথা বলে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন দিলীপ অগস্তি।