—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
দুর্গাপুরে এসে তাঁর প্রশংসা করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিচারিকার কাজ করে, অসুস্থ স্বামীর দেখভাল করে যে ভাবে পঞ্চায়েত সামলাচ্ছেন তিনি, তা নজর কেড়েছিল দলের নেত্রীর। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য টিকিট পাননি মেমারির বিজুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্না রায়। মনোনয়ন পর্বের শেষ দিন, বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ ঝর্না যোগ দেন কংগ্রেসে।
তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে দল যোগ্য সম্মান দেয়নি। তাই কংগ্রেসে যোগদান করেছি। দল আমাকে চিনতে পারল না।আমার সততার কোনও দাম পেলাম না।’’
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিয়ে হয় ঝর্নার। দুই মেয়ে বিবাহিত। স্বামী কয়েক বছর ধরে নানা রোগে শয্যাশায়ী। সংসারের খরচ জোগাতে পরিচারিকার কাজ তাঁর ভরসা। ২০১৮ সালে প্রধান হওয়ার পরে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ঝর্না। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি, কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নেন। এর সঙ্গেই পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ, সামাজিক প্রকল্প সব কিছু সামলেছেন তিনি। বিরোধীরাও তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেননি। এ দিন অবশ্য দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘আমাকে দল টিকিট পাওয়ার যোগ্য মনে করল না, এটাই কষ্টের।’’
ঝর্নার সঙ্গে টিকিট না পাওয়া কর্মীদের একটা বড় অংশও কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁদের বেশির ভাগই ওই ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজুর ১-এর উপপ্রধান আসফর মোল্লা ও দুই সদস্য, সাতগেছিয়া ২ প্রধান সকলমনি টুডু, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জাহানারা বিবি, কর্মাধ্যক্ষ মহসিন মণ্ডলেরা। ইসমাইল নিজেও টিকিট পাননি এ বার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি বিধানসভার প্রার্থী ছিলাম। দু’বার জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম। আমাকেই দল প্রার্থী করেনি। সে জন্য আর কে প্রার্থী হয়নি, সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা দল ছেড়েছেন, তাঁদের দলে ধরে রাখার দায়িত্ব ব্লক সভাপতি আর মন্ত্রীর ছিল।’’ ব্লক সভাপতি (মেমারি ২) হরিসাধন ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসার পর থেকে ওই প্রধানের পা পড়ত না মাটিতে। মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ঠিক ছিল না। গ্রামের মানুষের আপত্তিতেই দল তাঁকে প্রার্থী করেনি।’’
এ দিন কালনা ১ ব্লকের হাটকালনা এবং কৃষ্ণদেবপুরের দুই পঞ্চায়েত সদস্য-সহ বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মীও যোগ দেন কংগ্রেসে। ব্লকের কিসানমান্ডিতে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য, জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বুলবুল আহমেদ, কালনা কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলেরা। তাঁদের দাবি, শতাধিক তৃণমূল কর্মী তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন। অনেকেই কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়নও জমা দেন এ দিন। হাটকালনা পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্য রিপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। মানুষ আমাদের চান। তার পরেও টিকিট মেলেনি। তাই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি।’’ বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জানান তিনি। বিধায়কের দাবি, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং বুথের মানুষ যাঁর উপরে ভরসা করেন, তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে।
ভাতারের নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান কাকলি সামন্ত এবং বলগোনা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান আমজাদ শেখও এ দিন কংগ্রেসে যোগ দেন। ভাতার ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নূর আলমও কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাসুদেব যশের দাবি, ‘‘দল যাঁদের কাজে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, তাঁরাটিকিট পাননি।’’
বিজুর ১-এর প্রাক্তন বুথ সভাপতি বাপন মুর্মু, সাধারণ সম্পাদক কালীরাম ভট্টাচার্যের দাবি, ব্লক সভাপতি হরিসাধন ঘোষ যোগাযোগ রাখেন না। জয়ের পরেও গুরুত্ব দেন না। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কংগ্রেসে আসা অন্য কর্মীদেরও দাবি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী যেহেতু মন্ত্রী তাই রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর কথায় প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী বেছেছে। বহিরাগত, বিজেপি থেকে আসা অস্বচ্ছ্ব ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও সিদ্দিকুল্লার দাবি, ‘‘আমি কোথাও কলম চালাইনি। বুথ থেকে ব্লকের কোর কমিটি পর্যন্ত পাঁচটি স্তরেবৈঠক হয়েছে। সেখানেই নাম চূড়ান্ত হয়েছে। জনগণের সঙ্গে যাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তাঁদেরই প্রার্থী করা হয়েছে।’’
ভাতারের নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের কালুত্তক গ্রামের শতাধিক তৃণমূল কর্মী, সমর্থক এ দিন সন্ধ্যায় তাঁদের দলে যোগ দেন বলে দাবি করেছে সিপিএম। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা যুব তৃণমূল সম্পাদক জুলফিকার আলির দাবি, দাবি ভিত্তিহীন। যোগদানকারীরা তৃণমূলের কর্মী নন।