পাঁচ জন। বাঁ দিক থেকে, সুব্রত অধিকারী, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী মিশ্র, দিব্যেন্দু ভগৎ ও মানস দাস। নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরসভায় পাঁচ জন মেয়র পারিষদের নাম ঘোষিত হল। হয়েছে শপথবাক্য পাঠও। দুপুর ১২টা ৭ মিনিট নাগাদ মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানান, জামুড়িয়ার সুব্রত অধিকারী, রানিগঞ্জের দিব্যেন্দু ভগৎ, আসানসোল উত্তরের গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল দক্ষিণের মানস দাস ও কুলটির ইন্দ্রাণী মিশ্রকে মেয়র পারিষদ সদস্যের তালিকায় রাখা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, এই নাম ঘোষণার পরেই ‘অসন্তোষ’ দেখা দিয়েছে দলের কাউন্সিলরদের একাংশের মধ্যে। এ দিন পারিষদদের মধ্যে দফতর বণ্টন হয়নি। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এই কাজ শেষ করতে আরও অন্তত এক মাস সময় লাগবে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা।
পুরভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। মেয়র ও চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণ হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি। এর পরেও, দীর্ঘদিন মেয়র পারিষদ ও বরো চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষিত না হওয়ায়, বিরোধীরা সমালোচনা করতে ছাড়ছিলেন না। অবিলম্বে মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা করা-সহ পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী, বিজেপির চৈতালি তিওয়ারি। এই অবস্থায় পুর-কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি মেয়র পারিষদ সদস্যদের নাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি বিরোধীদের। যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, চলতি মাসের শেষের দিকে আসানসোলে সভা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এই বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ দিন আংশিক মেয়র পারিষদের নাম ঘোষণা হলেও, তাঁদের দফতর বণ্টন না হওয়ায় ফের সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী চৈতালি তিওয়ারির টিপ্পনী, “কিস্তি প্রথায় মেয়র পারিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে! কিন্তু দফতর দেওয়া হল না। এটা আরও লজ্জার।” তাঁর অভিযোগ, এটা পুরসভার কর্মসূচি হলেও, তাঁদের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়নি। কংগ্রেসের গোলাম সারওয়ার মনে করেন, “দফতরহীন মেয়র পারিষদ বানিয়ে আখেরে সাধারণ মানুষের লাভ হল না।” প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের তাপস কবিও বলেন, “মেয়র পারিষদ সদস্যদের শপথগ্রহণের পরে, দফতর পাননি, তা অতীতে হয়নি। এটা তৃণমূলের দলীয় ‘কোন্দলের’ বহিঃপ্রকাশ।”
বিরোধীদের এই কটাক্ষের জবাবে চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দ্রুত দফতর ভাগ হবে। এ নিয়ে বিরোধীদের কোনও চিন্তার কারণ নেই। ওঁদের গঠনমূলক ভাবনা ‘নেই’ বলেই শুধু কটাক্ষ করেন।” অমরনাথ জানান, দফতর ভাগ না হলেও, স্বাস্থ্য, জল, নিকাশি, নগরোন্নয়ন ও রাজস্ব আদায়— প্রাথমিক ভাবে এই পাঁচটি দফতর ঠিক করা হয়েছে। মেয়র বিধান বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দফতর বণ্টন করা হবে। আপাতত, তাঁরা নিজেদের এলাকার উন্নয়ন ও পরিষেবা প্রদানের কাজ করবেন।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিব্যেন্দু ভগৎ ছাড়া, বাকি চার জনই এই পদে প্রথম বার মনোনীত হয়েছেন। দিব্যেন্দু গত বোর্ডে স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন। বাকি চার জনের মধ্যে সুব্রত অধিকারী ও ইন্দ্রাণী মিশ্র প্রথম বার কাউন্সিলর পদে জিতে এসেছেন। সুব্রত জামুড়িয়ার তৃণমূল কর্মী। কিন্তু ইন্দ্রাণী মিশ্র পুরভোটের দিন পনেরো আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে টিকিট পান। যা নিয়ে কাউন্সিলরদের একাংশ ‘ক্ষুব্ধ’ বলে দাবি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কাউন্সিলরের ক্ষোভ, “বহু বছর ধরে দলের কাউন্সিলর হয়ে জিতে এলেও, আজ সম্মান পেলাম না। এটা নেতৃত্বের একপেশে মনোভাব।”এ দিনের কর্মসূচি শেষে গত পাঁচ বারের কাউন্সিলর শিখা ঘটক ও চার বারের কাউন্সিলর শ্রাবণী মণ্ডল ক্ষোভ চেপে না রেখেই বলেন, “আশা করেছিলাম, জীবনের শেষে এসে এ বার পদ পাব। পাইনি! তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নাগরিকদের সেবা করে যাব।” এই ‘অসন্তোষ’ প্রসঙ্গে মেয়রের বক্তব্য, দলীয় নেতৃত্ব যাঁকে কাজের বলে মনে করেছেন, তাঁকে পদে বসিয়েছেন। সকলেই মিলেমিশে কাজ করবেন।