আসানসোলের গোপালপুরের জিটি রোডের পাশে পড়ে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার। ছবি: পাপন চৌধুরী।
চলতি মাসে আসানসোল পুর-এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি, জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমানে ৩৩২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মিলেছে। এর মধ্যে দুর্গাপুর পুর এলাকায় ১৮৮ জন, আসানসোল পুর এলাকায় ১০৮ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে জেলার পুর-এলাকায় সাফাই ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পুর-প্রশাসন অভিযোগে আমল দেয়নি।
আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগত বলেন, “আমাদের পুর-এলাকায় তিন জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছি।”
পুরসভা সূত্রে খবর, গত ১০ অগস্ট আসানসোলের ইসমাইল লাগোয়া বেলতলার অবিনাশ সাউ (২০), ২৬ অগস্ট জামুড়িয়ার নন্ডীর বাসিন্দা ইটভাটার কর্মী বুঁধনি হাঁসদা (৩৭) এবং ওই দিন রাতেই বার্নপুরের পুরানহাটের চন্দনা চট্টোপাধ্যায়(৬৫) ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে অবিনাশ দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে, চন্দনা দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে এবং বুঁধনি আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শুধু তাই নয়, সোমবার পর্যন্ত আসানসোল জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সাত জন। পাশাপাশি, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪১ জন ভর্তি। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাসের বক্তব্য, “ডেঙ্গি আক্রান্তদের অবস্থা স্থিতিশীল। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কি না, তা জানতে এলাইজা পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
যদিও, আসানসোল পুরসভা জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই নন্ডী, পুরানহাটের মতো এলাকাগুলিতে প্রতিষেধক ছড়ানোর কাজ হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এলাকায় গিয়ে আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দাদের কেউ জ্বরে আক্রান্ত কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। জ্বরে আক্রান্ত কারও হদিস মিললে রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও, শহরবাসীর একাংশ জানাচ্ছেন, সোমবারেও আসানসোল পুর-এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বর্জ্য ডাঁই হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। নর্দমার জল রাস্তার উপর দিয়ে বইছে। নরসিংহবাঁধ, পুরানহাট, কল্যাণপুর, এসবি গড়াই রোড,ধাদকা রোড, নিউটাউন সর্বত্র একই ছবি বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যেখানে-সেখানে আবর্জনা, জমা জল দেখা যাচ্ছে। ফলে, যা হওয়ার তাই ঘটছে। তৃণমূল পুর-প্রশাসন চালাতে যে একেবারে ব্যর্থ, এই ঘটনা তার প্রমাণ।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, “আসানসোল হোক বা দুর্গাপুর, ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ তৃণমূল। এদের কাছে মানুষের জীবনের কোনও মূল্য নেই।”
যদিও বিরোধীদের অভিযোগে আমল দিচ্ছেন না দুই পুরসভার কর্তারা। দুর্গাপুরের পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতিটি এলাকায় ও হাসপাতালে নজর রাখা হচ্ছে। কোনও এলাকায় সমস্যা হলেই স্বাস্থ্যদল পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর সংযোজন: “বিরোধীদের কাছে অনুরোধ, কোথাও কোনও সমস্যার খবর পেলে, সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” দুর্গাপুরের পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাখি তিওয়ারিরও বক্তব্য, “সাফাই অভিযানে জোর দেওয়া হয়েছে। পুর-এলাকার সব ক’টি কুয়োর মুখ জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়া দেওয়ার নতুন প্রযুক্তির যন্ত্র আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” এ দিকে, আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগত জানান, ডেঙ্গির মোকাবিলায় ন’শো জনের একটি স্বাস্থ্যদল গঠন করা হয়েছে। ডেঙ্গির উপসর্গ বোঝার জন্য দলটিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দলের সদস্যেরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, সে খোঁজ করছেন। প্রয়োজনে রক্তের নমুনাও পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কোথাও জল জমা রয়েছে কি না, তা দেখে পদক্ষেপ করছে দলটি। তবে দিব্যেন্দুর আক্ষেপ, “এই কাজ করার সময় অনেকেই সহযোগিতা করছেন না।”
পাশাপাশি, সিএমওএইচ (পশ্চিম বর্ধমান) শেখ মহম্মদ ইউনুসের বক্তব্য, “ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিত নিয়মগুলি পালন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।”