জামালপুর থানায় নিখোঁজদের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।
খুন করে দেহ লোপাটের অভিযোগের ঘটনার পরে সপ্তাহ তিনেক পেরিয়ে গেলেও দেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ধৃতদের ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে হুগলির ডানকুনি খালে মাটি কাটার যন্ত্র নামিয়ে ও ডুবুরির সাহায্য নিয়ে দেহ খুঁজলেও হদিস মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার রাতে নিখোঁজদের পরিজনেরা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানায় এসে সিআইডি তদন্তের দাবি জানান। জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য তদন্তভার হস্তান্তর নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন শুধু জানান, তাঁরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বীরভূমের ইলামবাজারের বাসিন্দা শামিম খান ও চালক বরুণ মুর্মু গত ৪ অগস্ট পিক-আপ ভ্যান নিয়ে কলকাতার গড়িয়ার একটি কারখানায় বিস্কুট কিনতে বেরোন। গত দু’বছর ধরে তাঁদের সঙ্গে যাতায়াত করে হুগলির ডানকুনির আকতার আলি মল্লিক। পর দিন থেকে তাঁদের খোঁজ মিলছিল না। পরে, জামালপুরে মশাগ্রামের কাছে পিক-আপ ভ্যানটির খোঁজ মেলে। শামিমের পরিজনেরা জামালপুরে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ডানকুনি টোলপ্লাজ়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সে সূত্র ধরে প্রথমে আকতারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে, ডানকুনিরই যুবক, আকতারের বন্ধু শেখ আব্দুল করিম ও শেখ সামিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় তাদের কাছে দাবি করে, শামিম-বরুণকে খুন করে ডানকুনির খালে পোঁতা হয়েছে।
ধৃতদের আদালতে তুলে দু’দফায় ১৪ দিন হেফাজতে নেয় পুলিশ। জামালপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে ১২ অগস্ট থেকে দফায়-দফায় ডানকুনি খালে তল্লাশি চালানো হয়। প্রথমে পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে দেহ খোঁজা হয়। কিন্তু কোনও সূত্র মেলেনি। পরে, ধৃতদের দেখানো জায়গা খোঁড়া হয়। বেশ কিছু জায়গায় ডুবুরি নামানো হয়। বিপর্যয় মোকাবিলা দলও নামানো হয়েছিল। আবার নৌকা করে পুলিশ বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি চালায়। দেহ উদ্ধার না হওয়ায় মামলায় খুনের ধারা যোগ করা যাচ্ছে না বলেও জানায় পুলিশ।
শুক্রবার জামালপুর থানায় এসে শামিমের মা সামেনা বিবির দাবি, ‘‘পুলিশ অনেক তদন্ত করল। এ বার সিআইডি তদন্ত করে আমার ছেলে জীবিত না মৃত, তা জানাক।’’ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে থানায় এসেছিলেন বরুণ মুর্মুর স্ত্রী তুলসী। তাঁরও দাবি, ‘‘আমার আড়াই বছর ও এক বছরের দুই ছেলে। বড় ছেলে বাবাকে খুঁজছে। আমার স্বামী কোথায় গেলেন, তা জানতে চাই।’’ শামিমের দিদি মোমেনা খাতুন-সহ অন্য পরিজনেরাও সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জামালপুর থানায়।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘জেরায় ধৃতদের বক্তব্য বা তাদের দেখিয়ে দেওয়া জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। তল্লাশি জারি রয়েছে। অন্য ভাবেও তল্লাশি চলছে।’’ এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খানও বলেন, ‘‘তল্লাশি চালানো হয়েছে। আরও কিছু সূত্র মিলেছে। তা ধরে খোঁজ করা হচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, খালে গোবরের স্তর রয়েছে। তাতে তল্লাশি চালাতে মুশকিলে পড়ছেন তদন্তকারীরা। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোবরের স্তর সরানোর জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তরফে হুগলি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।