কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে মা ও মেয়ে। নিজস্ব চিত্র
চলন্ত ট্রেনের কামরায় ভিড় ছিল মোটামুটি। তার মধ্যেই দেখা যায়, এক যুবতী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। কার্যত অসহায় অবস্থা মহিলার মায়েরও। শেষমেশ কামরায় থাকা মহিলা এবং পুরুষ, সব যাত্রী মিলেই প্রসবের ব্যবস্থা করেন। যুবতী কন্যাসন্তানের জন্ম দিতে সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বুধবার এমনই ঘটনা ঘটেছে আজিমগঞ্জ-কাটোয়া লোকালে।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ২ ব্লকের বাছারা গ্রামের বাসিন্দা সাহিনা বিবি জানান, সকাল ৯টা নাগাদ অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে বানেরা বিবিকে নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আসবেন বলে বাজারসউ স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়েন। কিন্তু ট্রেনে ওঠার আধ ঘণ্টা পরেই তীব্র হয় প্রসব যন্ত্রণা। তখনই এগিয়ে আসেন সবিতা চৌধুরী, কলিমা বিবি-সহ কামরায় থাকা মহিলারা। পুরুষ যাত্রীরাও জায়গা ফাঁকা করে দেন। সঙ্গে থাকা শাড়ি, চাদর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় যুবতীর চারপাশ। খানিক বাদে সেখানেই শোনা যায়, সদ্যোজাত শিশুকন্যার কান্নার আওয়াজ।
সকাল ১০টা নাগাদ কাটোয়া স্টেশনে ট্রেনটি ঢুকলে পুরুষ যাত্রীরা জিআরপি-কে ঘটনার কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে মহিলা রেল পুলিশ বানেরাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ভ্যানে চাপিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের চিকিৎসক আরএন মণ্ডল জানান, মা ও মেয়ে, দু’জনেই সুস্থ আছেন।
ঘটনার পরে সবিতারা বলেন, ‘‘বুঝতে পেরেছিলাম, সময় নেই। তাই আমরাই প্রসব করিয়েছি।’’ যাত্রী ও জিআরপি-কে অভিনন্দন জানিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানান, দেরি হলে বিপত্তির আশঙ্কা ছিল। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রামনগর-কাদখালি গ্রামের বাসিন্দা বছর ২২-এর বানেরা ও তাঁর মা সাহিনা।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে ওই গ্রাম থেকে নিকটবর্তী কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেন নিয়ে যাওয়া হল না যুবতীকে? সাহিনা জানান, তাঁদের বাড়ির কাছেই রয়েছে শক্তিপুর ব্লক হাসপাতাল। সেখানে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা সে ভাবে নেই। তাই কাটোয়ায় আসা। তবে এ দিন সাধারণ ভাবেই প্রসব করেছেন ওই যুবতী।