winter

ঠান্ডা কম, ঘাটতি খেজুর রসে

এ বার ট্রেন কম চলায়, গাড়ি ভাড়া করে আসতে চাইছেন না বিক্রেতারা। ভাল গুড় দেড়শো টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া ও পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৪
Share:

চলছে খেজুর গুড় তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পেরিয়েও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। আকাশও মেঘলা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় খেজুর রসের অভাব দেখা দিয়েছে, দাবি শিউলিদের। রসের জোগান কম হওয়ায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ভাল মানের পাটালি বা ঝোলা গুড়েও। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতারা গুড়ের খোঁজে আসছেন ঠিকই, কিন্তু মন ভরছে না অনেকেরই।

Advertisement

পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর, পাটুলি, পলাশপুলি, চুপি এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। শীতের শুরুতেই তাতে বাঁধা হয় মাটির হাঁড়ি। ভোরের আলো ফুটতেই রসের হাঁড়ি নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিউলিরা। সেই রস উনুনের ঢিমে আঁচে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় গুড়। তবে এ বার রসের বড় অভাব, বলছেন শিউলিরা। তাঁদের দাবি, বেশির ভাগ গাছ থেকে অর্ধেকেরও কম রস মিলছে। তাতে ভাল মানের সুগন্ধি গুড় তৈরি হচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে গুড় তৈরি করেন আলি মহম্মদ শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘একশোটা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। তবে ভাল রস পাইনি। গুড় কম করতে পেরেছি।’’ বিদ্যানগরের মৃণাল দাস, মন্টু দাসেরাও জানান, খাঁটি গুড়ের পাটালি কেজি প্রতি দুশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গুড়ে ভাল গন্ধ না হওয়ায় খরিদ্দারদের মন ভরানো যাচ্ছে না।

Advertisement

শিউলিরা জানান, প্রতিবার গুড় কিনতে কলকাতা, হাওড়া থেকে পাইকারি খরিদ্দারের আসেন। এ বার ট্রেন চলা শুরু হলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই আসেননি। পূর্বস্থলীর এক পাটালি বিক্রেতার কথায়, ‘‘গুড় তৈরির জ্বালানি খরচ বেড়েছে। তবে বাইরের খরিদ্দারদের চাহিদা তেমন না থাকায় আগের বছরের দামেই গুড় বিক্রি হচ্ছে।’’

কাটোয়ার খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের বিকিহাট ও দাঁইহাটের চরপাতাইহাট এলাকায় কয়েকশো বাসিন্দাও এই সময় গুড়ের ব্যবসা করেন। রস জ্বাল দেওয়ার গন্ধে ভরে যায় এলাকা। ছোট-ছোট গর্ত করে পরিষ্কার কাপড়ে পেতে গুড় ঢেলে জমিয়ে তৈরি হয় পাটালি। ছাঁচ থেকে তুলেই পাটালি চলে যায় দোকানে। তবে এ বছর পরিস্থিতি আলাদা বলছেন ওই বাসিন্দারা। বিকিহাট গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী আরতি মণ্ডল বলেন, ‘‘অন্য বছর প্রচুর রস পাই। রস জ্বাল দিয়ে ঝোলা গুড়, পাটালি আলাদা করে তৈরি, প্যাকিং করতেই সারা দিন কেটে যায়। কিন্তু এ বার রস কম হওয়ায় গুড়ও কম। লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’

দাঁইহাটের চরপাতাইহাটের বাসিন্দা ঠাকুরদাস মণ্ডলও জানান, প্রতি বছরই খেজুর গুড় অন্য জেলা, ভিন্‌ রাজ্যেও পাঠান তাঁরা। কিন্তু এ বার ট্রেন কম চলায়, গাড়ি ভাড়া করে আসতে চাইছেন না বিক্রেতারা। ভাল গুড় দেড়শো টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে না, দাবি তাঁর।

জেলার এক সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, কনকনে ঠান্ডা পড়লে খেজুর গুড়ের রসের ঘনত্ব তৈরি হয়। সেই রস থেকে সুগন্ধি গুড় হয়। এ বার ঠান্ডার অভাব রয়েছে। আবার গুড়ের জন্য পতিত জমিতে আলাদা ভাবে খেজুর গাছ চাষ করা হয়। পতিত জমির সংখ্যা কমায় গাছও কমছে।

কালনার মিষ্টি ব্যবসায়ী রণজিৎ মোদক, দেবরাজ বারুইরা বলেন, ‘‘শীতের মাখা সন্দেশ, গুড়ের রসগোল্লার চাহিদা অনেক। গুড়ের মান ভাল না হলে মিষ্টিও খোলতাই হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement