Coronavirus

করোনায় ফের মৃত্যু, সিদ্ধান্ত কড়া ব্যবস্থার

প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, খণ্ডঘোষের ওই ব্যক্তি সর্দি-কাশি-জ্বরের উপসর্গ নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। ১৪ জুলাই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ‘পুল টেস্ট’ হয়। তাতে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসায় ‘সোয়াব’ পরীক্ষা করানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০৩:২২
Share:

বর্ধমানের বড়নীলপুরে গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে এলাকা। দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞার ফেস্টুনও। ছবি: উদিত সিংহ

করোনায় আক্রান্ত আরও এক জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল পূর্ব বর্ধমানে। বৃহস্পতিবার সকালে খণ্ডঘোষে মৃত্যু হয় বছর চুয়াল্লিশের এক ব্যক্তির। এ দিনই বিকেলে তাঁর করোনা রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, খণ্ডঘোষের ওই ব্যক্তি সর্দি-কাশি-জ্বরের উপসর্গ নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। ১৪ জুলাই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ‘পুল টেস্ট’ হয়। তাতে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসায় ‘সোয়াব’ পরীক্ষা করানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। এরই মধ্যে এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘মৃত্যুর পরে ওই ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট এসেছে। দেখা যাচ্ছে, তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন।’’ জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘জেলায় এখনও দু’জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। তবে খণ্ডঘোষের ওই ব্যক্তির মৃত্যু কো-মর্বিডিটিতে।’’ এর আগে মেমারি এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

করোনা রুখতে এ দিনই আরও কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলা প্রশাসনের ‘অনলাইন’ বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতর থেকে বর্ধমান ও কাটোয়ায় জোরদার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। প্রয়োজনে ‘এলাকা-লকডাউন’ করার প্রস্তাব দেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বৃহস্পতিবার ফের বৈঠকের পরে বর্ধমানের নীলপুর ‘এলাকা-লকডাউন’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাটোয়া শহরে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। এ দিনই কালনা মহকুমা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শনিবার থেকে বিকেল ৫টার পরে দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে।

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘গণ্ডিবদ্ধ এলাকার মাপ বাড়িয়ে ‘লকডাউন’ হয়েছিল। এ বার বর্ধমানের নীলপুর, কাটোয়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকা কড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এই বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, পুলিশ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা বাঁশ দিয়ে ঘেরা থাকলেও পুলিশের কোনও নজরদারি থাকছিল না বলে অভিযোগ উঠছিল। পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেল থেকে প্রতিটি গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় নজরদারি শুরু হয়েছে। সেখানে থাকা বাসিন্দাদের অত্যাবশকীয় পণ্যের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করেছে থানা। বিভিন্ন পুরসভার তরফে গত দু’দিন ধরে শহরের মোড়ে করোনা-সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, আগে গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছিল। পরে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার পরিধি বাড়িয়ে লকডাউন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা ধরে সংক্রমণের পরিস্থিতি বিচার করে ‘এলাকা-লকডাউন’, আরও বেশি করে অনুশাসনের চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। ওই সব এলাকায় শুধু ওষুধ ও অত্যাবশকীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকবে। দোকান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, জনসভা-ধর্মসভা বন্ধ থাকবে। বাজার, কল-কারখানা বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্ধমানের নীলপুর এলাকা ও কাটোয়া শহরেই আপাতত কড়া নজরে রাখার কথা ভাবা হল কেন? জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, বর্ধমান শহরে এখনও পর্যন্ত ২২ জন করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তার মধ্যে ১০ জনেরই বাড়ি শহরের ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই তিনটি ওয়ার্ড পড়ে বড়নীলপুর ও ছোটনীলপুরে। সে জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর বুধবার ‘এলাকা-লকডাউন’ করার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে কাটোয়া শহরে এখনও পর্যন্ত ১৩ জন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। এ নিয়েও উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। শহরের যে সব জায়গায় করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে, সেখানে ব্যারিকেড করা হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অনেকেরই কোনও হেলদোল নেই। রাস্তায় ভিড় জমছে। দূরত্ববিধি বা ‘মাস্ক’ পরার নিয়ম ভাঙতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই। তাই কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানান।

কালনা শহর ও লাগোয়া এলাকায় শনিবার থেকে বিকেল ৫টার পরে দোকানপাট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে কালনা থানার ওসি, পুরসভার প্রশাসক এবং বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। মহকুমাশাসক (কালনা) সুমনসৌরভ মোহান্তি জানান, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দোকানপাট। বন্ধ হয়ে যাবে খেয়া পরিষেবাও। শুধু এটিএম, ওষুধের দোকান এবং চিকিৎসকের চেম্বার খোলা থাকবে। দোকানগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ‘মাস্ক’ না পরে আসা কোনও ক্রেতাকে জিনিস বিক্রি করা চলবে না। ১৪ দিন পরে ফের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান মহকুমাশাসক।

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement