প্রতীকী ছবি।
বাড়ির কর্তা মিলনকান্তি বিশ্বাস (৮০) মারা গিয়েছেন দিন পাঁচেক আগে। তাঁর পচা-গলা মৃতদেহ আগলে, ঘর বন্ধ করে রেখেছিলেন তাঁর ৭৫ বছরের স্ত্রী ও প্রায় ৫০ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়ে। ঘটনাস্থল পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়ণপুরের পিঠাইকেয়ারি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার সকালে সালানপুর থানা ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ দাবি করেছে, প্রাক্তন রেলকর্মী মিলনকান্তিবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের পিঠাইকেয়ারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে, পুরুলিয়ার একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতের ময়না-তদন্ত করিয়ে দাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে পিঠাইকেয়ারি এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর আসে, গত ১৪ নভেম্বর সকাল থেকে ওই পরিবারের কাউকে বাইরে দেখা যাচ্ছে না। ঘরের সমস্ত দরজা, জানলা বন্ধ। ডাকাডাকি করেও সাড়া মিলছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, একমাত্র মিলনকান্তিবাবুকে মাঝেমধ্যে ঘরের বাইরে দেখা যেত। তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে দেখা যায় না। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু কালীপুজোর দিন সকাল থেকে মিলনকান্তিবাবুর ঘরের সব দরজা, জানলা বন্ধ রয়েছে। বাড়ির বাইরে কাউকেই দেখা যায়নি।
বুধবার কয়েকজন প্রতিবেশীরা কৌতূহলবশত ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু কোনও আওয়াজ পাননি। শেষমেশ পুলিশে খবর দেন তাঁরা। সালানপুর থানা ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দরজা ভেঙে পুলিশ ভিতরে ঢুকে দেখে, মাটিতে পড়ে রয়েছে মিলনকান্তিবাবুর দেহ। দেহে ঘিরে বসে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠায়। আসানসোলের কাল্লা শ্মশানে দেহটি সৎকার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কী ভাবে মিলনকান্তিবাবুর মৃত্যু হয়েছে স্পষ্ট করে কিছু জানা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে।
রূপনারায়ণপুরের এই ঘটনা প্রসঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালের মনোবিদ ডিপি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই দু’জন মানসিক ভারসাম্যহীন তা বোঝাই গিয়েছে। এ ধরনের মানুষ ভুল ধারণার বশে আপন কেউ মারা গিয়েছেন তা বিশ্বাস করতে চান না। এটা এক ধরনের ‘স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া’ রোগ। যুক্তি দিয়ে বোঝালেও তাঁরা বুঝতে চান না।’’