দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) । — ফাইল চিত্র।
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) ২০৩০-এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান রামনরেশ সিংহ জানান, এ জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিতেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ২০৩০-এর মধ্যে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে জন্য কাজও শুরু হয়েছে বলে রামনরেশ জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, দুর্গাপুরে ডিটিপিএসে ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট তৈরি করা হবে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে থমকে থাকা ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট নির্মাণের কাজ ফের চালু করা হবে। কেন্দ্র প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কোডার্মায় জমি রয়েছে। সেখানে এর আগে প্রথম ভাগের কাজ হয়েছে। এ বার শুরু হবে দ্বিতীয় ভাগের কাজ। দু’টি ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট তৈরির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে।
ডিভিসি কর্তাদের দাবি, সরকার পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। সে দিকে তাকিয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌর-প্যানেল বসাতে প্রায় পাঁচ একর জমি লাগে। জমি-সমস্যার কারণে, ডিভিসি-র জলাধারগুলিতে ভাসমান ‘সৌর-প্যানেল’ বসানো হবে। এর ফলে প্রায় দু’হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই তিলাইয়া ও পাঞ্চেত জলাধারে প্রথম পর্যায়ে ৫৫৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ‘রিজার্ভার’ রয়েছে। সব রিজার্ভারের উপরে ‘সৌর-প্যানেল’ বসানো হবে। পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর ফলে মোট প্রায় ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ ছাড়া, ডিভিসি-র ফাঁকা জমিতেও সৌর-প্যানেল বসানো হচ্ছে। যেমন, কোডার্মায় ফাঁকা জমিতে ১২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণ কাজশুরু হয়েছে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও জোর দিচ্ছে ডিভিসি। সে জন্য পাম্প স্টোরেজ় বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হবে। পাঞ্চেত জলাধারে এক হাজার মেগাওয়াটের পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামনরেশ। তিনি জানান, একই ভাবে ঝাড়খণ্ডের বোকারোর কাছে লাগু পাহাড়ে ১৫০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প গড়া হবে।
বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংবহন পরিকাঠামো খাতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। নতুন সাবস্টেশন, লাইন তৈরি, পুরনো পরিকাঠামোর ক্ষমতা বৃদ্ধি-সহ নানা কাজ হবে।
এ দিকে, কেন্দ্রের কাছে দুর্গাপুর ব্যারাজে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদের পাওয়ার এনার্জির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, সাংসদ সুনীল মণ্ডল। তিনি জানান, এর ফলে বালি ও পলি তোলা হবে। জলধারণ ক্ষমতা বাড়বে। বন্যার সমস্যা মিটবে। চাষের কাজে সেই জল ব্যবহার করা যাবে। লাগোয়া এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। সম্প্রতি সাংসদের সঙ্গে রামনরেশ দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শন করেন। রামনরেশ বলেন, “খুবই ভাল পরিকল্পনা। এ জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের সহযোগিতা দরকার। দুই সরকারের মধ্যে বৈঠকের পরে বিশেষজ্ঞ কমিটি এসে সব খতিয়ে দেখবে। সে রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা সম্ভব হবে।”