ধানের বীজতলার পরিচর্যা। মঙ্গলকোটের ভাটপুকুরে। নিজস্ব চিত্র।
জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। রাতের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে দশ-বারো ডিগ্রির কাছাকাছি। জেলার নানা জায়গায় ‘কোল্ড ইনজুরি’তে ভুগছে ধানের বীজ। কৃষি দফতরের দাবি, এ সপ্তাহে ঠান্ডা আরও বাড়বে। চাষিদের বীজতলা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কনকনে ঠান্ডায় কালনা ১, ২, পূর্বস্থলী ১, ২, মন্তেশ্বর, মেমারি-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে ধানের চারায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা যাচ্ছে। এই রোগের প্রকোপে বীজতলায় ধানের চারা প্রথমে হলুদ হয়ে যায়। পরে জমিতে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। গোড়াতেই সতর্ক না হলে বোরো মরসুমে ধান চারার জোগান পেতে সমস্যা হবে, দাবি তাঁদের।
কালনার এক ধান চাষি গোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘সপ্তাহ দু’য়েক বীজতলা তৈরি হয়েছে। জমিতে আঙুলের মত চারাও তৈরি হয়েছে। তবে ঠান্ডা যত বাড়ছে বীজতলায় ধান চারার মধ্যে সতেজ ভাব উধাও হয়ে যাচ্ছে।’’ কৃষি দফতরের দাবি, এখনও এই রোগে খুব বেশি বীজতলা নষ্ট হয়নি। তবে এখন থেকে সতর্ক না হলে বিপদে পড়তে হতে পারে। মন্তেশ্বরের কৃষি আধিকারিক কনক দাস বলেন, ‘‘দেনুড়-সহ কিছু কিছু জায়গা থেকে অল্প জমিতে ধানের বীজতলায় কোল্ড ইনজুরির খবর মিলেছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নাগাদ আরও ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।’’
সতর্ক থাকার উপায়? জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের পরামর্শ, শীত বাড়লেই ধানের বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সন্ধ্যায় বীজতলায় মাটির নীচের অংশ থেকে তোলা গরম জল প্রবেশ করাতে হবে। সকালে জমির নালা দিয়ে সেই জল বাইরে বার করে দিতে হবে। ঠান্ডার সঙ্গে সঙ্গে বীজতলায় দেখা যায় সকালে জমাট শিশির। নিয়মিত ওই শিশির চারার পাতার ডগার দিক থেকে ঝরিয়ে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পার্থবাবুর দাবি, ‘‘এই সময়ে অনুখাদ্য হিসাবে জিঙ্ক ইডিটিএ ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে স্প্রে করা জরুরি। পাশাপাশি, ছত্রাক ঘটিত রোগের আক্রমণ ঠেকাতে কার্বনডাজিম ১ গ্রাম অথবা ট্রাইসাইক্লাজল ০.৭৫ প্রতি লিটার জলে স্প্রে করার প্রয়োজন রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বীজতলা থেকে চারা মূল জমিতে রোপণের সময় ব্যাপক ঠান্ডা পড়লে, চারা-মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চাষিদের অপেক্ষা করতে হবে স্বাভাবিক ঠান্ডার জন্য।’’ কৃষি-কর্তাদের দাবি, অধিক ঠান্ডা ধানের বীজতলার জন্য বিপজ্জনক হলেও আলু, সর্ষে এবং আনাজ চাষের পক্ষে ভাল।