ভেঙে পড়েছে বাড়ি। রানিগঞ্জের নূপুর গ্রামে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এর তাণ্ডবে কোথাও ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। গাছ ভেঙে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা জুড়ে প্রায় সাড়ে আটশো বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে বেশি প্রভাব পড়েছে পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা ব্লকে। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির জন্য ত্রিপল ও ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সমীক্ষা চলছে।
বৃহস্পতিবার পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের ছোড়া পঞ্চায়েতে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বালুডাঙার একটি বাড়ির দু’দিকের দেওয়াল ও একটি বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে গিয়েছে। নবগ্রাম পঞ্চায়েত নির্মিত মুরগি খামারের কাঠামোর টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নবগ্রাম, ডাঙালপাড়া, ছোড়া, বালুডাঙা-সহ ব্লক জুড়ে ৮০টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। নবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সতন সোমণ্ডল জানান, পঞ্চায়েতের উদ্যোগে বছরখানেক আগে একশো দিন কাজের প্রকল্পে কুমারডিহি-কোড়াপাড়ায় মুরগি খামার তৈরি করে মুরগি পালনের দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সুজাতা মুর্মু ও এলসি সোরেনরা জানান, ঝড়ের আগাম সতকর্তা থাকায়, দেড় হাজার মুরগি ছানাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফলে, আর্থিক ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।
এ দিকে, বিডিও (জামুড়িয়া) কৃশাণু রায় জানিয়েছেন, এই এলাকার খোট্টাডিহি, ভুরি, ফরফরি, ছত্রিশগণ্ডা-সহ কয়েকটি এলাকায় ৮৭টি বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। বেশ কিছু বাড়ির দেওয়াল ভেঙেছে। একই চিত্র রানিগঞ্জ ব্লকেও। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের বল্লভপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ৪০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি, বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমাতেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ চলে যায় বিধাননগরের বিস্তীর্ণ অংশে, এমএএমসি টাউনশিপের একাংশে, সেপকো টাউনশিপে। মাঝে এক-দু’বার বিদ্যুৎ এলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের বিদ্যুৎ চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ভোর ৩টে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ওই সব এলাকায়। এবিএল টাউনশিপে সকালে গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের তারের উপরে। ফলে, ছ’টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে। পুরো টাউনশিপ বিদ্যুৎহীন হয়ে যায়। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা এসে গাছের ডাল কেটে ফের খুঁটি বসিয়ে বিদ্যুতের লাইন মেরামত করেন। কয়েকঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ ফেরে এবিএল টাউনশিপে।
ডিএসপি টাউনশিপের জয়দেব রোড-সহ বেশ কিছু এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাস্তার উপরে। পানাগড় বাজারে গাছ পড়ে পুরনো জিটি রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়। বুধবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে থাকা কাঁকসার বাঁশকোপা ফুট ওভারব্রিজ। এই ব্রিজের টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন বোর্ডও ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছে। ঝড়ে ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবাতে বেশি প্রভাব পড়েছে রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া এলাকায়। দুর্গাপুর ও আসানসোলে খুব একটা এর প্রভাব পড়েনি।
মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে জানিয়েছেন, মহকুমায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ব্লক ও পঞ্চায়েতগুলিকে। দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের নিজের নিজের এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের দরকার মতো সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাভলি রায় জানান, মোট তাঁর ওয়ার্ডে কম-বেশি ৪৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি পুরসভা থেকে পাওয়া আটটি এবং নিজের উদ্যোগে আরও ১৫টি ত্রিপল বিলি করেন ওয়ার্ডে।
দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে সিপিএম। এইচএফসি বস্তি-সহ কয়েকটি এলাকায় ত্রিপল বিলি করা হয় বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার।