একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
নিয়ম মানা-না মানা, কোথাও বা পরিষেবা পেতে গিয়ে হয়রানি। বৃহস্পতিবার সকালে জেলার নানা ব্যাঙ্কের শাখাগুলি ঘুরে এমনই নানা প্রতিক্রিয়া ও ছবি নজরে এসেছে।
আসানসোল পুলিশ লাইন এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা খোলার ঘণ্টা দু’য়েক আগে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইসিএলের প্রাক্তন কর্মী প্রেমাংশু দণ্ডপাট। টাকা তুলতে এসেছিলেন। ঠিক সময়ে ব্যাঙ্ক খোলার পরে বেলা ১১টা নাগাদ ব্যাঙ্ককর্মীরা তাঁকে জানান, ‘সার্ভার ডাউন’ তাই দুপুর ২টোয় আসতে হবে। প্রেমাংশুবাবু বলেন, ‘‘একে মাসের প্রথম দিক। তার উপরে ‘লকডাউন’। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা পেলাম না।’’
আসানসোলের আপকার গার্ডেনের একটি ব্যাঙ্কের শাখায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সরকারি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক পল্লবকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুপুর ১২টা নাগাদ ব্যাঙ্ককর্মীরা জানান, সার্ভার ডাউন থাকায় এখন কাজ হবে না। ২টোর সময়ে আসতে বললেন। খুবই ভোগান্তি হল।’’ অন্য একটি ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়ে থাকা রাজ্য সরকারের প্রাক্তন কর্মী মুক্তরাম কর জানান, পেনশনের টাকা না আসায় সমস্যায় পড়েছেন। তবে ‘সার্ভার ডাউন’ থাকা নিয়ে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানান আসানসোলের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা আধিকারিক।
পাশাপাশি, আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গেল, থিকথিকে ভিড়। ভিড় সামলাতে প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন রয়েছেন। কিন্তু গ্রাহকদের বেশির ভাগই উপযুক্ত করোনা-সতর্কতায় দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়াননি। এক সময়ে পুলিশ ও ব্যাঙ্ককর্মীদের দেখা গেল, মেঝেতে চক দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে গোল চিহ্ন একে গ্রাহকদের দাঁড়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সে সব মানতে দেখা যায়নি গ্রাহকদের।
একই ছবি দেখা যায় দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাতেও। সেখানে দরজার সামনে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে ব্যাঙ্কের বাইরে লাইনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রাহকেরা। যদিও ব্যাঙ্কের ভিতরে সেই পরিস্থিতি ছিল না। ওই ব্যাঙ্কেরই দুর্গাপুর কেমিক্যালস কলোনির শাখায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, গেটের সামনে জড়ো হয়েছেন গ্রাহকেরা। কেউ নিয়ম মানছেন না। ওই ব্যাঙ্কেরই এফসিআই শাখা-সহ সব কটি শাখাতেই ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে সাবান দিয়ে হাত দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দুর্গাপুরের এসবিএসটিসি গ্যারাজ মোড়ের শাখার দরজায় থাকা ব্যাঙ্ককর্মী বলেন, ‘‘চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সামলাতে। কিন্তু সব সময় সবাই নিয়ম মানছেন না।’’ ব্যাঙ্কের ভিতরে কাউন্টারের সামনে অবশ্য গ্রাহকেরা দাঁড়িয়েছিলেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই। ব্যাঙ্কের ওই শাখায় ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা না থাকলেও সিটি সেন্টার শাখায় তা রয়েছে।
সেই সঙ্গে আসানসোলের বেশির ভাগ এটিএমগুলি বন্ধ থাকায় গ্রাহকেরা সমস্যায় পড়েন। দুর্গাপুরের দু’টি বড় ডাকঘর, গ্যারাজ মোড়ে ও সিটি সেন্টার, দু’টি ডাকঘরে এ দিন শুধু অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম হয়েছে। আজ, শুক্রবার থেকে ডাকঘরে স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে সেখানেও গ্রাহকের ভিড় হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে।