—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এক দিকে শিক্ষক ‘নিয়োগ-জট’। অন্য দিকে বদলির নিয়মে সমস্যা। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পশ্চিম বর্ধমানের গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি নিয়ম বলছে, প্রতি ৩৫ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু সেই নিয়ম অনেক গ্রামের স্কুলেই খাটছে না বলে দাবিঅভিভাবকদের একাংশের।
দুর্গাপুর শহরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, কোনও স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৭০, শিক্ষক ১৭ জন। অর্থাৎ, গড়ে ১০ জন পিছু এক জন করে শিক্ষক। কোনও স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৭ এবং শিক্ষক আট জন। প্রায় ১৫ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক। কোথাও ৬৮৭ জন পড়ুয়ার জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৩২ জন। এমন ছবি দেখা গিয়েছে শহরের প্রায় সব স্কুলেই। কিন্তু, গ্রামের দিকের স্কুলগুলিতে অন্য ছবি। যেমন, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে (উচ্চ মাধ্যমিক) পড়ুয়ার সংখ্যা ১,০৪৭। শিক্ষকের সংখ্যা ১৮ জন। অর্থাৎ, প্রতি ৫৮ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক। ওই স্কুলে মাধ্যমিকে আরও ১২ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পাঁচ জন শিক্ষক থাকার কথা। প্রধান শিক্ষক জইনুল হক জানান, বাণিজ্য বিভাগের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেওশিক্ষকের অভাবে সেটিচালু করা যায়নি। কাঁকসা ব্লকের জামদহ উচ্চ বিদ্যালয়ে (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রায় ৯০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন। অর্থাৎ, প্রায় প্রতি ৬৪ জনে এক জন করে শিক্ষক আছেন। ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে বাংলা, ইংরেজি বাদে বাকি পাঁচটি বিষয়ে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র তিন জন। কোনও রকমে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকার পোষিত বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া-শিক্ষকের অনুপাতের ভারসাম্য নেই বলেঅভিযোগ উঠেছে।
জানা গিয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দূরের স্কুলে নিয়োগের ফলে, অনেক শিক্ষক সমস্যায় পড়েছিলেন। তাঁদের কাছাকাছি স্কুলে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে ২০১২-য় প্রথমে ‘মিউচুয়াল ট্রান্সফার’ চালু হয়। ২০২০-২১ সালে ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে সাধারণ বদলি চালু হয়। পরে, অবশ্য সেটি বন্ধ হয়ে যায়। জেলা শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের দাবি, দুই ধরনের বদলির সুবিধা দিতে গিয়ে বহু স্কুলে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নিয়োগ জটিলতা।
এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন অভিভাবকদের একাংশও। জেমুয়ার বাসিন্দা বেশ কয়েক জন অভিভাবকের বক্তব্য, “স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। মাঝেমধ্যেই তাই ক্লাস হয় না। নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক স্কুলে থাকলে পড়ার মান আরও উন্নত হবে।”
‘নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষের দাবি, “এই পরিস্থিতি যে তৈরি হবে, সেই আশঙ্কা করেছিলাম আমরা। তাই শুরু থেকে উৎসশ্রী প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলাম।প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দ্রুত এর সমাধান করা উচিত।” ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এই বৈষম্য দূর করতে সংগঠনের তরফে শিক্ষা দফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিক্ষা দফতর কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সমস্যা মিটবে বলে আশা করছি।”
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুই বলেন, “শিক্ষা পোর্টালে স্কুলভিত্তিক সব তথ্য নথিবদ্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন। যা ব্যবস্থা হওয়ারসেখান থেকেই হবে।”