প্রতীকী ছবি।
পাঁচ টাকা ‘ফি’ নিয়ে রোগী দেখতেন সিপিএমের কালনা শহরের চিকিৎসক নেতা গৌরাঙ্গ গোস্বামী। টানা ছ’বার কালনা পুরসভার ভোটে জেতা এমন এক ‘জনপ্রিয়’ নেতার আকস্মিক মৃত্যু কালনা শহরে দলের কাছে বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সিপিএমের সব নেতাই। পুজোর পরে রাজ্যে পুরভোট হতে পারে বলে চর্চা শুরু হয়েছে। কালনা পুরসভার বিরোধী দলনেতা গৌরাঙ্গবাবুর অনুপস্থিতিতে আগামী পুর-নির্বাচনে শহরে বামেদের নেতৃত্ব কে দেবেন, তাই এখন সিপিএমে আলোচনার প্রধান বিষয়।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মৃত্যু হয় সিপিএমের কালনা শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গবাবুর। তাঁর পদে কে আসবেন, তা নিয়ে সিপিএম নেতা-কর্মীদর মধ্যে আলোচনা চলছে। পুজোর পরে, সিপিএমের শাখা স্তর থেকে ধাপে ধাপে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা। এরিয়া কমিটির সম্মেলনেই পরবর্তী সম্পাদক নির্বাচিত বা মনোনীত হবেন।
এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘গত প্রায় তিন দশক ধরে গৌরাঙ্গবাবু ছিলেন কালনা শহরে আমাদের দলের মুখ মুখ। পুরপ্রধান থেকে বিরোধী দলনেতা— সব পদই সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। দল-মত নির্বিশেষে সকলে ওঁকে শ্রদ্ধা করতেন। ওঁর মৃত্যু দলে শূন্যতা তৈরি করেছে।’’
গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে একটি আসনও পায়নি বামেরা। তারই মধ্যে রাজ্যে যে কয়েকটি এলাকায় এখনও বামেদের সামান্য প্রভাব রয়েছে, তার মধ্যে পড়ে কালনা শহরের কিছু অঞ্চল। মূলত গৌরাঙ্গবাবুর ভাবমূর্তির কারণেই সেখানে বাম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। তাদের ধারণা, গৌরাঙ্গবাবুর অনুপস্থিতিতে পুরভোটে কালনায় সিপিএমকে ‘বেগ’ পেতে হবে।
গত পুরভোটে কালনা পুরসভায় ছ’টি ওয়ার্ডে জেতে বামেরা। তবে গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে সেখানেও তাদের ভোট-ব্যাঙ্কে ধস নামে। কালনার এক সিপিএম নেতার কথায় ‘‘লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে ফল যা-ই হোক, পুরভোটে গৌরাঙ্গদাকে হারানো কঠিন ছিল। ফলে, (পুরভোটে) কিছু সমস্যা তো হবেই।’’ তবে এ নিয়ে দলের কোনও নেতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। কালনা শহর এরিয়া কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এরিয়া কমিটির সম্মেলন হবে নভেম্বরে। সেখানেই পরবর্তী সম্পাদক ঠিক হবে।’’
গৌরাঙ্গবাবুর অনুপস্থিতিতে তৃণমূল কি বাড়তি সুবিধা পাবে? কালনার তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, ‘‘সিপিএমের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। গৌরাঙ্গদার নিজের ওয়ার্ডেও লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে সিপিএম ভাল ফল করেনি।’’ বিজেপি নেতা সুশান্ত পান্ডের বক্তব্য, ‘‘শহরে গৌরাঙ্গবাবু জনপ্রিয় ছিলেন। তৃণমূলকে পছন্দ করেন না, এমন যে সব ব্যক্তি ওঁকে ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করতেন, তাঁরা সিপিএমকে ভোট দিতেন। এ বার তাঁদের ভোট বিজেপিতে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’’