প্রতীকী ছবি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তবু দু-চারটে বার্তা দেখা যায়, ‘প্রতিরোধে সামিল হন।’ কিন্তু ডিজিটাল বিশ্ব ছেড়ে মাঠে-ময়দানে সেই ‘প্রতিরোধ’ কোথায়!
এই ক্ষোভ শোনা যাচ্ছে কাটোয়া মহকুমায় সিপিএমের নিচুতলার সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেই। তাঁদের দাবি, স্রেফ ‘প্রতিরোধ’-এর অভাবে মহকুমায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি—এই দুই স্তরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মার্কশিটে ‘শূন্য’ পেয়েছে সিপিএম। অন্তত গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের হিসেবে। ওই কর্মীদের অভিযোগ, যে-সব এলাকায় দলের শক্ত সংগঠন ছিল, সেখানেও শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়নি নেতাদের। ফলে, মনোবল হারিয়েছেন কর্মীরাও।
সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় নেতাদের মাঠে না নামার দিকেই আঙুল তুলেছেন কর্মীরা। যেমন, ঘটনা এক: মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার দিনে সিপিএম কর্মীদের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। কিন্তু তার পরেও এলাকায় কোনও রকম প্রতিবাদ মিছিল বা অবরোধ, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি সিপিএম-কে।
ঘটনা দুই: মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য গত কয়েক দিনে কাটোয়া সুবোধস্মৃতি রোডের সিপিএম কার্যালয়ে সাতশো থেকে এক হাজার দলীয় কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু সিপিএম কর্মীদের দাবি, নেতারা ‘মহিলা কর্মী’দের নিরাপত্তার কথা বলে আর শেষমেশ মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাননি।
ঘটনা তিন: শাসক দলের সন্ত্রাসের ভয়ে কেতুগ্রাম ১ ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনগুলিতে ব্লক অফিসের ধারেকাছেও দেখা যায়নি সিপিএম নেতৃত্বকে।
অথচ, সিপিএম কর্মীদের দাবি, এই মহকুমার নানা এলাকায় সাম্প্রতিক কিছু নির্বাচনের ফলের নিরিখে এই অবস্থা হওয়ার কথা নয় দলের। যেমন, ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে কাটোয়া ১-র কোশিগ্রাম, গোয়াই, সুদপুর, আলমপুর ও কাটোয়া ২-র শ্রীবাটি, পলসোনা ও করুই পঞ্চায়েতে জেতে সিপিএম। কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতি, কেতুগ্রাম ২-র পাঁচটি পঞ্চায়েতে জেতে সিপিএম। মঙ্গলকোটেও বেশ কিছু পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম সদস্যও ছিলেন। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও কাটোয়া ১-র দু’টি, কাটোয়া একটি, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সব কটি পঞ্চায়েতেই এগিয়েছিল কংগ্রেস-সিপিএম জোট।
তা হলে কী এমন ঘটল যে, নেতাদের দেখা গেল না মাঠে-ময়দানে?
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, শাসক দলের সন্ত্রাসের জন্যই ‘সক্রিয়’ হওয়া যায়নি। উদাহরণ হিসেবে, তাঁরা সম্প্রতি একটি গোলমালে সিপিএম কর্মী তথা কাটোয়ার দু’জন শিক্ষকের নাম ‘মিথ্যা মামলা’য় জড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। ওই ঘটনার পরে গোটা কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে সিপিএম-কে মিছিল, মিটিং করতেও দেখা যায়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এমনকী পুরসভা মোড়ে পথসভা করায় ‘বেআইনি জমায়েতে’র মামলা করা হয় প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কখনও সন্ত্রাস, কখনও বা শাসক দলের নানা ‘প্রলোভনে’র সামনে দলের একটি বড় অংশই গুটিয়ে থাকছে বলে অভিযোগ নেতাদের। তবে অঞ্জনবাবুর দাবি, ‘‘কাটোয়ার একটি গ্রামেও স্বচ্ছ ভোট হলে আমরা জিতব।’’
কিন্তু জয় কী ‘ডিজিটাল প্রতিরোধ’-এই আসবে, সিপিএম কর্মীদের প্রশ্ন আপাতত এটাই। কেতুগ্রামের সিপিএম নেতা তমাল মাঝি অবশ্য বলেন, ‘‘পাঁচুন্দি, ভুলকুড়ি, কেতুগ্রাম মোড়ে প্রায়ই পথসভা হয়। আমরা অন্য দলগুলির মতো প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছি। তাতে ক্ষতি কী!’’
তবে আরও এক দিন পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, এ কথা ঘোষণা হতেই আশাবাদী সিপিএম কর্মীরা। নেতারাও জানান, অন্তত কিছু আসনে চেষ্টা করা হবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার।