তালিকা দিয়ে বাহিনীর টহলের দাবি সিপিএমের

নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলির দাবি ছিল, ভোটের অন্তত একমাস আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ মার্চ থেকেই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টহল শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:২০
Share:

বুধবার দুর্গাপুরে মেনগেট এলাকার রাস্তায়।—নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলির দাবি ছিল, ভোটের অন্তত একমাস আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ মার্চ থেকেই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টহল শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাহিনী এসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল, বর্ধমানের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকাতেও। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার মতো দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি এলাকাতেও স্বচ্ছ ভোট করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে সিপিএম। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে বুধবার জেলাশাসকের কাছে দুর্গাপুর পূর্ব, পশ্চিম ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলের দাবি জানাল সিপিএম।

Advertisement

সিপিএমের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় শাসকদলের হাতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আরও অভিযোগ, শাসকদলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে পুলিশ প্রশাসন। মিথ্যা মামলায় দলীয় কর্মীদের জড়িয়ে দেওয়া, হুমকি, মারধরের মতো ঘটনাও আকছার ঘটছে বলে সিপিএমের দাবি।

সিপিএমের দাবি পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিবাজার এলাকা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, ৩১, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় এই মুহূর্তে ভোট হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। একই পরিস্থিতি পাণ্ডবেশ্বরের জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিগঞ্জ, টেটিখোলা, শঙ্করপুর প্রভৃতি এলাকাতেও। সিপিএমের দাবি, এই সব এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল শুরু হোক। ভোটের আগে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানানো হয়েছে।

Advertisement

সুষ্ঠু ভাবে বিধানসভা নির্বাচন সম্পন্ন করতে জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আসা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্ব, আসানসোল, রায়না, কাটোয়ার মতো জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রায়না, কাটোয়াতে এসেছে এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুধবার সকালে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড, মাঠপাড়া, গাঙ্গুলিডাঙা, কেশিয়া প্রভৃতি এলাকায় টহল দিতেও দেখা গিয়েছে তাদের।

তবে প্রথমেই কেন রায়না বা কাটোয়াকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলের জন্য বেছে নেওয়া হল? বিরোধীদের দাবি, গত পুরভোটের পর থেকেই কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। সম্প্রতি শ্রীখণ্ডে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। একই হাল রায়নাতেও। রায়নায় সম্প্রতি বোমাবাজির জেরে মারা যান এক সিপিএম কর্মী। যদিও পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, ‘‘জেলার দুই কোণে এই দু’টি জায়গা রয়েছে। তাই আগে টহল শুরু হয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে সমস্ত আবেদন আসছে সেগুলি যথাযোগ্য ভাবে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী, এসডিপিও শচীন মাকড় ও কাটোয়া থানার ওসি সঞ্জীব ঘোষ। ভোটারদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে চান, কোনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে কি না। অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে কি না। সাধারণ মানুষ তাঁদের জানান, এখনও পর্যন্ত কোনও হুমকি নেই। তবে এলাকায় অশান্তি রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জওয়ানেরা প্রতিদিনই কাটোয়ার ৫টি ব্লক ও ২টি পুরসভার উপদ্রুত এলাকায় ভাগ হয়ে টহল দেবেন। কেন্দ্রীয় শিবির করা হয়েছে কাটোয়া থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের শ্রীখণ্ড কিসান মান্ডিতে।

শুধু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েই এ বার থেমে থাকতে চায় না নির্বাচন কমিশন। বেনজির ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয় নির্বাচম কমিশনের তরফে। দিল্লির নির্বাচন সদনের এই ফরমান গত ২৩ এপ্রিল রাজ্যের জেলার এসপি-দের কাছে নির্দেশিকার আকারে পাঠিয়েও দেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। আগামী ৭ মার্চ থেকে মোট ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় কী ভাবে কাজ করবে, তাও জানানো হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘‘২০১৬-র বিধানসভা ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ করতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে হবে।’’ কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই!’’

এ দিন সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার গলাতেও কার্যত একই সুর, ‘‘নির্বাচন ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দুর্গাপুরে এসে পৌঁছেছে। এখন সেই বাহিনীকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানো দরকার। আমরা নির্দিষ্ট কিছু এলাকার উল্লেখ করে জেলাশাসককে সেই দাবিই জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement